আন্তর্জাতিক ডেস্ক- মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। এনিয়ে দুটি দেশ একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে। সর্বশেষ ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সেনা ব্রিগেড দফতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের হামলায় ১৮ সেনা নিহতের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।ভারত এ ঘটনাকে পুঁজি করে হামলা চালাতে পারে এই আশংকায় যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে ছোটখাটো মহড়াও সেরে নিয়েছে তারা। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে শংকিত সমর বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে দেশ দুটি নিজেদের ভাণ্ডারের কোন কোন অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের চেষ্টা করবে, তারও একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। যুদ্ধে পাকিস্তানের যে পাঁচটি অস্ত্র ভারতের ভয়ের কারণ হতে পারে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণমূলক মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’।
১. জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটার বোম্বার
স্বল্প ব্যয়ের এই বিমানটি আকাশ প্রতিরক্ষায় পাকিস্তানকে বাড়তি সুবিধা দেবে। জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান চীনের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেছে পাকিস্তান। এটাকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফাইটার ফ্লিটের মেরুদণ্ড ভাবা হয়।
মিরেজ-৩ ও ৪ এবং চেংদু এফ-৭ ফাইটারের উন্নত ভার্সন হিসেবে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর জন্য প্রায় ২০০টি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান তৈরি করা হচ্ছে। এটা অনেকটা ফ্রান্সের মিরেজ-৪ এবং আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ ফ্যালকন ফাইটারের মতোই।
আধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার সিস্টেম, শক্তিশালী রাডার সিস্টেম এবং স্থলভাগে হামলার জন্য লেজার সুবিধা সম্পন্ন এই জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান। এছাড়া আকাশ থেকে আকাশে হামলার ক্ষেত্রে এতে সংযুক্ত রয়েছে ইনফ্রারড মিসাইল। এটি ৮০০০ পাউন্ড জ্বালানি ও যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম।
২. খালিদ-ক্লাস সাবমেরিন
যুদ্ধযানের সংখ্যায় এবং জনবলে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও প্রযুক্তিতে কিন্তু পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। খালিদ-ক্লাস সাবমেরিন সে ধরনের একটি অস্ত্র। করাচি বন্দর অচল করে দেয়ার ভারতীয় নৌবাহিনীর যে কোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে পারে এ সাবমেরিন।
খালিদ-ক্লাসের তিনটি সাবমেরিন অত্যাধুনিক। সমুদ্রে এটিকে শনাক্ত করা কঠিন। এছাড়া এতে রয়েছে গাইডেড টর্পেডো। এফ-১৭ মোড-২ টর্পেডো ২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ২৫০ কেজি ওয়ারহেড নিয়ে হামলা চালাতে সক্ষম। এতে রয়েছে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও।
৩. পরমাণু বোমা
পাকিস্তানের পরমাণু বোমা ভারতের বিশাল সামরিক বাহিনীর বিপক্ষে দেশটির সুরক্ষা হিসেবে দেখা হয়। কারণ, কনভেনশনাল যুদ্ধে অল্প কয়েক দিনেই কাবু হয়ে যাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তখন নিরুপায় হয়ে তারা হাত বাড়াবে পরমাণু অস্ত্রের দিকে। আর এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ।
পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যার দিক দিয়ে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে এগিয়ে। পাকিস্তানের পরমাণু বোমার সংখ্যা ১২০-১৩০টি যা সংখ্যায় ভারতের চেয়ে ১০টি বেশি হতে পারে। এছাড়া পরমাণু বোমা সহজে ব্যবহার উপযোগী করার ক্ষেত্রেও দেশটির বিশেষ কৃতিত্ব আছে।
পাকিস্তান পরমাণু বোমা হামলার জন্য দুটি মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে। একটি হলো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান আর অন্যটি হলো ব্যালিস্টিক মিসাইল। এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে মধ্য ভারতে হামলা চালানো সম্ভব। এছাড়া রয়েছে স্বল্পপাল্লার গজনভি এবং শাহীন ক্ষেপণাস্ত্র। স্বল্পপাল্লার নতুন দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আবদালি ও নসর। দূরপাল্লায় ব্যবহার করতে পারে ঘুরি-২ ক্ষেপণাস্ত্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্র সর্বোচ্চ ২০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
৪. সন্ত্রাসী গ্রুপ
সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে পাকিস্তানের সমরাস্ত্র ভাণ্ডারের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ, যেগুলো সাধারণত বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে থাকে, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত সরকারকে সর্বাত্মক বাঁধিয়ে দিতে চাপে ফেলতে পারে।
কনভেনশনাল যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম। যখন ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে অগ্রসর হবে, তখনই পাকিস্তান তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
৫. চালকবিহীন বিমান (ড্রোন)
পাকিস্তানের সমরাস্ত্র ভাণ্ডারের অন্যতম সংযুক্তি দুই ধরনের চালকবিহীন বিমান (ড্রোন)। এগুলো হলো- শাহপার এবং উকাব। এগুলো সাধারণত গোয়েন্দা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তুলনামূলক ছোট আকারের ড্রোন উকাব যুদ্ধক্ষেত্রে হামলার উপযোগী বলে দাবি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের।
এস/কে/এন