মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির: রাজধানীর বিমানবন্দর হতে উত্তরা এলাকায় ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের হাতে সম্বল ও প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরাও। বিশেষ করে যারা বিদেশ যেতে ঢাকায় আসেন বা বিদেশে থেকে এসে বাড়ির উদ্দেশে যান তারা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। পুলিশের দাবি বিমানবন্দর এলাকায় যেসব ছিনতাইকারী সক্রিয় তারা সবাই ঢাকার বাইরে থেকে আসে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ফ্লাইওভারসহ উত্তরা বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজের নিচে ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও দামি বস্তু ছিনিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র। আবার প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে এসে পথরোধ করে ছিনতাই করছে। কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। কেউ সাহস দেখালে তাদের ওপরও চালানো হয় হামলা। ফলে ঘটছে প্রাণহানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত সুফল মিলছে না।

airport road

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীতে ছিনতাইরোধে নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে। এরপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ছে ছিনতাইকারীরা। তবে রাতে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবং ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঠেকাতে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহপুরে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাজই হলো যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া। রাস্তায় নানা রকমের মানুষের চলাচল। তাই কে ভালো, কে ছিনতাইকারী বোঝা মুশকিল। তারপরও মাঝে মাঝে ছিনতাইকারী ধরে চালান দিয়ে থাকি।’

বেসরকারি মেডিকেলের সিনিয়র স্টাফ নার্স রানা ছিনতাইয়ের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রাত ১টার দিকে আমি যে রিকশার দিয়ে যাচ্ছি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন অনেক পথচারীও। হঠাৎ একজন তার হাতে মোবাইল টান দিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। কেউ কিছু বরতে পারলো না। 

ছিনতাই ৩

উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, আজমপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের আনাগোনা রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেখা যায়। 

আহাদ নামে এক ব্যক্তি কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, ‘আমি গাড়ি চালাই, সেই সুবাদে দিনরাত রাজধানীর ব্যস্ততম রাস্তায় চলাচল করি। কিছুদিন আগে উত্তরা কলেজের সামনে এক ছিনতাইকারীকে সুপারম্যানের মতো বাসের জানালা দিয়ে এক যাত্রীর কান ছিঁড়ে সোনার অলংকার নিয়ে পালাতে দেখেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত গাড়ির সামনে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে রাস্তার বিপরীত দিক দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।’

ছিনতাইকারী সদস্য শাহীন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘বিশ্বাস করে কইতাছি আপনি কিন্তু টিভিতে দেখাইন না আমাকে? আমগো জায়গা ভাগ কইরা দেয়া হয় রাইতে। কে, কোথায় কাজ করুম। আমরা তিন থ্যাইকা চারজন বিমানবন্দরে কাজ করি বেশি।’

বিমানবন্দরে কেন? জানতে চাইলে সে বলে, ‘এই এলাকার সব চিপাচাপা আমার ছোটকাল থ্যাইকা পরিচিত, এমন কি পুলিশরাও ধাওয়া দিলে পালাতে সহজ হয়। সারাদিন বিমানবন্দর স্টেশনে থাকি। দু’একটা ছিনতাইয়ের অপেক্ষায়।’   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘আমরা রাস্তায় গাড়ি সামাল দিতেই সময় পাই না। তাই ছিনতাইকারী নিয়ে তেমন কাজ করার সুযোগ থাকে না। এর মধ্যেও চেষ্টা করি যাতে সবাই নিরাপদে চলাচল করতে পারে।’

DMP Ittefaq

উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছিনতাই কমানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ডিএমপি পক্ষে থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের পোশাক ছাড়া সিভিল টিমের মাধ্যমে ছিনতাইকারী ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছি। এ পর্যন্ত যত ছিনতাইকারী ধরেছি তারা অধিকাংশই টঙ্গী গাজীপুর থেকে আসে।’

ছিনতাইকারীদের অপ্রতিরোধ্য তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, ‘রাতের শেষভাগে দুর্বৃত্তরা বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর ছিনতাই করে থাকে। এমনিতেই রাতে ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যায়। রাত ২টার পর রাস্তা আরও অনেক ফাঁকা থাকে। এ সময় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়। এই বিষয়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সিভিল পুলিশ কাজ করছে। রাস্তায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সব সময় আমাদের পুলিশ সদস্য সজাগ থাকে এবং তাদের আটক করে থাকে। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয়। এরা একটি সংঘবদ্ধ দল। একত্রিত হয়ে ছিনতাই করে থাকে। তবে উত্তরা পূর্ব থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা এবং বিমানবন্দর থানা এই তিনটি থানায় ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেশি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আব্দুল্লাহপুরে যেসব ছিনতাই হয়, তারা অধিকাংশই টঙ্গী থেকে আসে। সেইসাথে বেড়িবাঁধ থাকার কারণে তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে চুরি করে টঙ্গী পালাতে সক্ষম হয়। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারীদের ধরার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন স্পটে সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়িয়েছি এবং পুলিশ সদস্যদের সিভিল টিম এবং বিভিন্ন স্পটে বিশেষ পুলিশ টিমের মাধ্যমে ছিনতাই কারীর ধরার জন্য কাজ করছে। প্রতিদিনই দুই-চারজন ছিনতাইকারী গ্রেফতার হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ছিনতাইকারী মাদকসেবী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে