সমাবেশের নামে বিএনপি যে বর্বরতা ও নৃশংসতা চালিয়েছে তা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না, এর দায় নির্দেশদাতাদের নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রোববার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশর ডাক দিয়েছিলো। সরকার, পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তারা যেখানে সমাবেশ করতে চেয়েছে, সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কথা বলে তারা সেটি শুরু হওয়ার আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান। বিচার বিভাগের প্রধান। তার বাসভবনে তারা হামলা চালিয়েছে এবং সেখানে ঢুকে গাড়ি পুড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে হাজার হাজার মিছিল সেই বাসভবনের সামনে দিয়ে গেছে সরকারি দল, বিরোধী দল। কাকরাইলার মোড়ে অনেক সময় অনেক গণ্ডগোল হয়েছে, কিন্তু কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি। তবে ইতিপূর্বে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের দরজায়, প্রধান বিচারপতির খাস খামারার দরজায় লাথি মেরেছে। অর্থাৎ তারা বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠানকে তোয়াক্কা করে না। গতকালের ঘটনা সেটি আবার প্রমাণ হচ্ছে।

পুলিশ বক্সে হামলা ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তারা। এরপর সবচেয়ে নেককারজনক হচ্ছে তারা পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে অ্যাম্বুলেন্সসহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি বাহিনী গাজার হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। আর এখানে বিএনপি-জামায়াত হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম হাসপাতালে হামলা কোন রাজনৈতিক দল করেছে বলে আমার জানা নেই।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে ৮০০ মানুষকে হত্যা করার পরও একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি, এই বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি বিএনপি এবং জামায়াত। বরং ইসরাইলে বাহিনীর অনুকরণে তারা গতকাল হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে এবং তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে। নাইটাঙ্গেল মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে পরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। ১০০ এর বেশি পুলিশ সদস্য আহত, দুজনের অবস্থা গুরুতর এবং আনসারের ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, এভাবে যখন তাণ্ডব শুরু করে তারা তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। যখন তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তখন প্রথমে বিএনপির নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান, তাদের সাথে সাথে কর্মী সমর্থকরাও চলে যান। গতকাল টেলিভিশনে এসব দেখে মনে হচ্ছিল যে, কোন জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে হামলা চালিয়েছিল আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়, তেমনি গতকাল বিএনপি-জামায়াত রাজারবাগে হামলা চালিয়েছে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল হামলা চালিয়েছে তারা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে রাজারবাগ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেয়েছিলাম। সেখানে বহু পুলিশ সদস্যকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেছি। বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যদের মাথায় তারা আঘাত করেছে, যাতে মৃত্যু হয়। যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আপনারা সেই জায়গায় দেখেননি, আমি লাশ দেখেছি। পেছনে কোপ দিয়ে নামিয়ে ফেলা হয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য। এগুলো কোন রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী দলের কাজ। বিএনপির-জামায়াত যে আবার ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালের অবস্থায় ফিরে এসেছে সেটা দেখা গেছে।

তিনি বলেন, এভাবে বর্বরতা কোন রাজনৈতিক দল করতে পারে না। এটির দায় শুধু যারা করেছে তাদের নয়, এটির দায় এটির নির্দেশ দাতাদের। কারণ তারা এই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। তারা বোমা নিক্ষেপ করেছে, পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। যদি সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় না দিত, তাহলে শতাধিক পুলিশ আনসার সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আহত হতো না। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বিধায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আহত হয়নি। ওরা হয়তো একটা মনগড়া তথ্য দিবে।

তিনি আরও বলেন, গতকালের সংঘর্ষে শামীম মিয়া নামের যে যুবদল নেতা মারা গেছেন বলে মির্জা ফখরুল সাহেবরা বলেছেন, তাদের রাজনীতি তো মিথ্যাচারের উপর নির্ভরশীল। তার পরিবার বলছে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তার গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। হাসপাতাল বলছে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ কি রকম মিথ্যাচার। সেটা বিবেচনা করতে হবে সবাইকে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্য হত্যার দায় এড়ানোর জন্য একজন সাধারণ মানুষ তাদের এ অপকর্মের জন্য মৃত্যুবরণ করেছে, সেটিকে যুবদল বলে পরিচয় দিচ্ছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশ, জনগণ, সরকার বরদাশত করতে পারে না এবং আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে পারিনা। যারা এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমাদের দায়িত্ব দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা, জনগণের স্বস্তি স্থাপন করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে