ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে শতাধিক নতুন আগ্রহী প্রার্থীর একটি তালিকা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে জমা পড়েছে। এসব প্রার্থীদের পারিবারিক অবস্থান, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কখন থেকে জড়িত, তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন, স্থানীয়ভাবে সামাজিক এবং দলের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে ভূমিকা কোন পর্যায়ে, এ ছাড়া এলাকায় জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য, বিশ্বস্ততা এবং ব্যক্তিত্ব আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে দলের চেয়ারপার্সন নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য দলটির কয়েক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য গোপনীয়ভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বিএনপির দফতরের পক্ষে।

দলটির এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেন, শুধু চেহারা ও নামকাওয়াস্তে প্রার্থী হলে হবে না। পারিবারিক ঐতিহ্য ও একই সঙ্গে দলে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। পাশাপাশি অতীতে সব আন্দোলন-সংগ্রামে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিপদের সময় পাশে ছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই মুখপাত্র বলেন, সব কিছু বিবেচনা করে নতুনদের মধ্যে অনেকের ভাগ্য খুলতে পারে। আবার অনেকের ভাগ্যের চাকা না-ও ঘুরতে পারে।

এদিকে সম্প্রতি বিএনপি চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আগামী একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বানের পর শুরু হয়েছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনী আগাম প্রচারণা। তার পর থেকে সারা দেশের শতাধিক আসনে মনোনয়ন পেতে তদবির ও লবিং করে যাচ্ছেন বিভিন্ন পেশাজীবী নতুন শীর্ষ নেতারা। এ উপলক্ষে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি এবার অর্ধশত পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও আমলা বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন।

এ জন্য সম্ভাব্য নতুন আগ্রহী প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি নিজেদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে জানান দিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে টানার পাশাপাশি নানা উপায়ে সাধারণ ভোটারদের নজর কাড়তে ব্যস্ত তারা। কিছু কিছু আসনে অনেককে কেন্দ্রের কয়েক শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন বলে কয়েকজন আশাবাদী প্রার্থী জানান। এ সুযোগে প্রচারণা চালিয়ে তারা এলাকায় পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসব পেশাজীবীর অধিকাংশই নমিনেশন পেতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলটির এক পেশাজীবী মানবকণ্ঠকে বলেন, ওয়ান ইলেভেন ও বর্তমান সরকারের নির্যাতনের সময় পেশাজীবীরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। তাদের এ ভূমিকার কারণে গতবারের চেয়ে এবার পেশাজীবীদের একাধিক নেতাকে মনোনয়ন দিতে পারে দলটি। বিএনপির এক সহ-সম্পাদক মানবকণ্ঠকে বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের পার্টির চেয়ারপার্সন মনোনয়ন দিতে পারেন। তাছাড়া পেশাজীবী নেতাদের অনেকেই এখন দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন বলেও তিনি জানান।

চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন এমন এক শীর্ষ নেতা জানান, আগামীতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী অর্ধশতাধিক পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, আমলা ও বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বিএনপির শাখা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, যারা অতীতে দলের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে কাছে ছিলেন এ ধরনের নতুন প্রার্থীদের নাম তার হাতে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ), ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম টাঙ্গাইল-৩, (ঘাটাইল), এম সাইফুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া), অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া নরসিংদী-৩ (শিবপুর), সাবেক সচিব ও আইজিপি আব্দুল কাইয়ূম জামালপুর-১, সাবেক সচিব আবদুল হালিম জামালপুর-২, সাবেক সচিব ব্যারিস্টার হায়দার আলী শেরপুর-২, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বরিশাল সদর, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম ঝালকাঠি-১, প্রফেসর ডা. রফিক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর), ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী), জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ঢাকা-১৭, (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট), বিএনপির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন (বরগুনা-২), সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নোয়াখালী-১ (চাটখিল), বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ফেনী-৩ (দাগুনভূঁইয়া-সোনাগাজী), ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি), মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হান্নান চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ), সাবেক আমলা ড. জালাল উদ্দিন চাঁদপুর-২ (মতলব), সাবেক সচিব ও আইজিপি এওয়াইবিআই সিদ্দিকী চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদ কুমিল্লা-৫, (বুড়িচং-বাহ্মণপাড়া), প্রফেসর ডা. এ জে ড এম জাহিদ হোসেন দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট), প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-সদর), প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম লাবু পিরোজপুর সদর, ডা. শাহদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া), ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন (ত্রিশাল-ময়মনসিংহ), ইঞ্জিনিয়ার আফজালুর রহমান সবুজ শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইরঘাট-ভেদরগঞ্জ), ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু দিনাজপুর সদর, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বরিশাল-১, ইঞ্জিনিয়ার মুনসেফ আলী সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা বাজার), ডা. মহসিন জিল্লুর চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া), কর্নেল (অব.) আব্দুল মজিদ লক্ষ্মীপুর-২, মামুন চৌধুরী স্টালিন নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আখতার হোসেন ও ব্যবসায়ী রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭, (রাঙ্গুনিয়া), শিল্পপতি আবুল কালাম (চৈতি কালাম), কুমিল্লা-৯ (লাকসাম), শিল্পপতি সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর), দৈনিক আমার দেশের পরিচালক শাকিল ওয়াহেদ সুমন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া), ব্যবসায়ী নেতা এস এম ফজলুল হক, ব্যারিস্টার মীর হেলাল ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)।

এ ছাড়া শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ঢাকা-৫, (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর), ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ঢাকা-১০, (ধানমণ্ডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এ বি ওবায়েদ ইসলাম বাগেরহাট-৪, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ)।

অন্যদিকে এসব প্রার্থীর সমর্থকরা জানান, নির্বাচনের আরো দেড় বছর বাকি থাকলেও তার আগেই মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আশাবাদী নতুন প্রার্থীরা।

মানবকণ্ঠ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে