songsod-bhabon

আন্তর্জাতিক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে বিদেশি অনুদানে চলা এনজিও তদারকির আইন করতে সরকারি উদ্যোগের কারণে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বিল পাশ হওয়ার পর সেটি নিয়ে এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।

বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৬ পাশ হওয়ার পর দেশী-বিদেশী বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, এটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক অগণতান্ত্রিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

এনজিওগুলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধনের দাবি তুলেছে। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিলে সম্মতি না দেয়ারও আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছেন।

সংসদে পাস হওয়া বিলটির অপরাধ বিষয়ক ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রধান আপত্তি দেখা যাচ্ছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনও এনজিও বা ব্যক্তি সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে “বিদ্বেষমূলক” এবং “অশালীন” কোনও মন্তব্য করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে।

এ আইনটি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবিসহ বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা সংসদীয় কমিটি ও সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন। সংযোজিত এই শব্দ দুটোকে সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে তারা মনে করছেন।

২০১৫ সালের নভেম্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সংসদ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে বিরোধী দল এবং সংসদের কোরাম সংকটসহ জাতীয় সংসদের নানা বিষয়ে সমালোচনা উঠে আসে। ঐ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক দশম জাতীয় সংসদকে “পাপেট শো বা পুতুল নাচের নাট্যশালা” বলে অভিহিত করেছিলেন।

এরপর সংসদ অধিবেশনে এ বিষয়টিকে সামনে এনে টিআইবির কঠোর সমালোচনা করেন সংসদ সদস্যরা।

আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত টেলিফোনে বিবিসিকে বলেন, সংসদ সংক্ষুব্ধ হয়েছে এবং টিআইবি নির্বাহী পরিচালকের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই এনজিও বিলে “বিদ্বেষমূলক এবং অশালীন” শব্দদুটি সংযোজন করা হয়েছে।

নতুন আইনকে ঘিরে এনজিওগুলোর উদ্বেগ প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “রাষ্ট্রে বিরোধী দলের ফান্ডামেন্টাল রাইটস আর এনজিওর রাইটস সমান হবে না”।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এটি যেহেতু ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা-অপ-ব্যাখ্যার সুযোগ থাকবে, এটা বৈষম্যমূলক ভাবে এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ব্যবহার করার সুযোগ আছে। তার ফলে যে প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে অধিকার ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কাজ করে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটা হুমকি হিসেবে দাঁড়াবে। কারণ এ প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কর্মে লিপ্ত” ।

বলা হচ্ছে এ আইনের কারণে এনজিওগুলো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চর্চা করে এবং ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারকে পরামর্শ দিতে পারবে না। মিস্টার ইফতেখারুজ্জামানের মতে, “সবসময় একটা ভয়-ভীতির মধ্যে থাকবে কে এটাকে বিদ্বেষমূলক মনে করে! কে এটাকে অশালীন মনে করে!”

ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন মনে করেন এটি সবার জন্যই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

এ আইনে নির্বাহী বিভাগ কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কিভাবে ক্ষতি হবে সেটি বোঝাতে অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি, “পুরনো যে আইন ছিল সেটার অধীনে বেশ কয়েকটা এনজিও’র পক্ষে কেস করেছিলাম। আমার মনে আছে যখন আমাদের সমাজসেবা মন্ত্রী মুজাহিদ সাহেব ছিলেন (যিনি পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলেন) উনি এরকম করে আমাদের দুটি এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তাদের রেজিস্ট্রেশনও ক্যানসেল করার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের পুরা যে ট্রাস্টিবোর্ড ছিল সবটা উনি বাতিল করে দিয়েছিলেন। আমরা শেষপর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে কিন্তু জিততে পারলাম কিন্তু জেতার জন্য লাগলো পাঁচ থেকে ছয়বছর। তার মধ্যে সংগঠনগুলো একদম শেষ হবার মতো অবস্থা, তারা একদম কাজ চালাতে পারেনি”।

তিনি বলেন, মূল যে সমস্যা এ ধারাটাকে এমনভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব যেখানে কোনও ধরনের আপনার কন্ট্রোল থাকবে না নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। একজন যদি অপছন্দ করে সে কিন্তু ব্যবস্থা শুরু করে দিতে পারবে, এ আইনের অধীনে সে একটা মামলা শুরু করতে পারবে এনজিওর বিরুদ্ধে এবং সেখানে কোনও রক্ষাকবচ নেই।

এদিকে বাংলাদেশে এখন দুই হাজারের ওপরে এনজিও আছে যারা বিদেশি অনুদানে পরিচালিত হয়। বিদেশি অনুদানে চলা এনজিও কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশে নানা রকম সমালোচনাও রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “দেশের মধ্যে যে এনজিওগুলো কাজ করে তারা যদি বিদেশি টাকা নিয়ে কাজ করে তাহলে বিদেশের স্বার্থে কাজ করবে কিনা? যেমন, জঙ্গিবাদের টাকা নিয়ে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে, আমেরিকান এইডের টাকা নিয়ে কাজ করলে আমেরিকান ফরেন পলিসির পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। সুতরাং এদের নিয়ন্ত্রণ করা এদের একটা রেগুলেশনের মধ্যে আনা একটা আইনের আওতায় আনা- এটা নিয়ে কিন্তু কোনও বিতর্ক নেই।”

এনজিও কার্যক্রমের সমালোচনা করলেও মিস্টার আকাশ আশঙ্কা করেন, নতুন আইনে “অশালীন” এবং “বিদ্বেষমূলক” এই শব্দটার ঠিকমতো সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা না হলে পরে এই আইনের প্রয়োগ করে সরকার যে কোনও লোককে, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলতে পারবে।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে