bojjropat

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৩ই  মে১৬) স্টাফ রিপোর্টার: গ্রামাঞ্চলে বড় বড় গাছ কেটে চাষের জমি বাড়ানো, বাড়িঘরে কনক্রিটের ব্যবহারসহ বজ্রপাত ঠেকানোর উপাদান কমে যাওয়ায় আগামীতে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প ছাড়াও ‘মহাদুর্যোগ’ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশে ঝড়ের মৌসুমে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বলে পরিসংখ্যানে জানা যায়। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, বজ্রপাত যে দুর্যোগ হতে পারে বিষয়টি আমাদের চিন্তায়ও ছিল না। কিন্তু প্রতিবছর মে মাসে যে সংখ্যক মানুষ বজ্রাঘাতে মারা যাচ্ছে, সেটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রামে বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন তারা।

গত কয়েক বছরে বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা অনেক। ফলে ২০১০ সাল থেকে বজ্রপাতকে আলাদাভাবে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করে এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ সম্পর্কিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, বজ্রাঘাতে একদিনে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। কখনও কখনও এই সংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি। এর সত্যতা মেলে ১২ মে একদিনে দেশের ১৬ জেলায় কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যুর খবরে।

দুর্যোগ ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কেবল বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৮। এর মধ্যে ১৪ শিশু ও ৩১ জন পুরুষ। আর ১২ মে একদিনেই ১৬ জেলায় কমপক্ষে ৪০ জন মারা গেছে। ২০১০ থেকে গত ৬ বছরের হিসাব বলছে, একেবারেই নজর না দেওয়া এই দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

২০১৫ সালে বজ্রাঘাতে ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মে মাসে। এই মাসে মোট ৯১ জন মারা যায়। এর মধ্যে মে মাসের ২ তারিখে ১৯ জন, ৭ তারিখে ১৮ জন এবং ১৫ তারিখে ১৪ জন মারা যায়।

কেন বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বড় গাছের অভাব বজ্রপাতে মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। শহরাঞ্চলে ঘরবাড়ি বেশি হলেও সেখানে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকায় বজ্রাঘাতে হতাহতের ঘটনা কম। কিন্তু গ্রামে এই নিরোধক হিসেবে কাজ করতো যে বড় বড় গাছ, তার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে গ্রামাঞ্চলে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেশি ঘটতে দেখা যায়। ফলে এখন বজ্রপাত থেকে নিরাপদে থাকার উপায় বের করতে হবে।

প্রাথমিকভাবে বজ্রপাতের সময় পানি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন, কনক্রিটের নিচে ঠাঁই নেওয়া এবং যেকোনও ইলেক্ট্রনিক বস্তু থেকে দূরে থাকতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে এবং এটি একসময় আপদ হিসেবে দেখা হলেও দুর্যোগের পর্যায়ে ছিল না। আমাদের ধাতব বস্তু ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। সেখান থেকেও নানা শঙ্কার তৈরি হয়। ফলে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে এ মৃত্যুর হার বাড়বে।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের সম্ভাবনার সময় ধাতব বস্তু স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ থেকে শুরু করে ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা বিপদজনক। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়।

কেন বজ্রাঘাতে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি- জানতে চাইলে রিয়াজ বলেন, ‘বজ্রপাতের ঘটনা খোলা জায়গায় বেশি দেখা যায়। আগে কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। এখন মাঠে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। ফলে মাঠে কাজ করা মানুষ আক্রান্ত হয় বেশি। এছাড়া পুকুর বা পানির সংস্পর্শে থাকাটাও একটা কারণ। সতর্কতার বিষয়গুলো ছড়িয়ে দেওয়ায় মনোযোগী হতে হবে।’

আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কালো মেঘ থেকে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে। মানুষ আসলে জানে না, বজ্রাঘাতে কীভাবে মৃত্যু হতে পারে। এই না জানার দোষ তাদের নয়। গ্রামে উঁচু ভবন, বড় গাছ কম থাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি বেশি হচ্ছে।’

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে