জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত ছিল তা খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করবে সরকার।

গত বছর আইনমন্ত্রী এ কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন এবং দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করার কথাও তিনি বলেছিলেন।কিন্তু গত এক বছর এ বিষয়ে আরও কোনো অগ্রগতির কথা জানা যায়নি।

তবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকারের এ সিদ্ধান্তটি বহাল আছে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চালানো হচ্ছে। কমিশন গঠনের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

শুক্রবার (৩ সেপেটম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, করোনা কিছুটা কমেছে, সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। আরও একটু কমলে কার্যক্রম শুরু হবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং সংসদে তা পাস করে বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। এ হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল দেরিতে হলেও তাদের বিচার হয়েছে এবং কয়েক জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। বিগত ২০১০ সালে খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি চলে আসছে এই হত্যাকাণ্ডে ষড়যন্ত্র ও পেছনে কারা জড়িত ছিল তা খুঁজে বের করে জাতির সামনে উন্মুক্ত করার। এই প্রেক্ষাপটে সরকার গত বছর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

গত বছর আগস্টে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদের বিচার হয়েছে। এর পেছনের যে রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্র ছিল সে ঘটনায় তদন্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো।

সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলেও গত এক বছরে এ কার্যক্রমের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। এ বছর শোকের মাস আগস্টে এ তদন্ত কমিশন গঠনের জোর দাবি ওঠেছে বিভিন্ন দিক থেকে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায়ও দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ বিষয়ে জোর দাবি জানান। এ আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার যে বিচার হয়েছে সেটা মূলত শুধু তার আত্মস্বীকৃত খুনিদের । এই বর্বরোচিত ঘটনার পেছনে কারা ছিল এবং কারা ষড়যন্ত্র করেছিল তার তদন্ত এবং বিচার এখনো করা হয়নি। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার জরুরি বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করে আসছে।

এ সব দলের নেতারা বলছেন সামরিক বাহিনীর কিছু অফিসার ও সৈনিকের দ্বারাই শুধু এই ন্যাক্কারজনক ও দুঃসাহসিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে অনেক বড় ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এ অভিযোগ জোরালো হয়ে ওঠে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি জানতেন। এ অভিযোগের পেছনের যুক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভূমিকা এ ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকাকে স্পষ্ট করে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া, এই কমিশনে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিদের রাখা হবে এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা চলছে। এ কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ও কমিশনের কাজের ধরন কি হবে সে সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নেওয়া হবে।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে