ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক। বিগত অনেক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয়ের সূচকে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও গত বছর তা হ্রাস পায়।

আর এই অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহে বিরাট ধ্বস নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র গত ফেব্রুয়ারি মাসেই যা ৯৩৫ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে তা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

মন্দার কারণে সারা পৃথিবীর অর্থনীতির ভগ্ন স্বাস্থ্যের সেরকম কোন ধাক্কা যে বাংলাদেশে লাগতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন তার কারণ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী রিজার্ভ।

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারের রিজার্ভকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল রিজার্ভগুলোর একটি বলেও ধরা হচ্ছিল। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সের।

অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা যে হিসেব দিচ্ছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েক বছরের মধ্যে গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরেই প্রথমবারের মত বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ে ২.৫% হারে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়।

আর চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আট মাসেই প্রবৃদ্ধি কমেছে আগের বছরের চাইতে গড়ে ১৫%। “এটি একটি বড় কনসার্ন (উদ্বেগ) আমাদের কাছেও”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. সাহা।

তিনি রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে যাওয়া। আর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে অর্থ পাঠানো।

বৈধ পথের তুলনায় অবৈধ পথে লাভ বেশী, তাই আগ্রহ বেশি প্রবাসীদের।                             বৈধ পথের তুলনায় অবৈধ পথে লাভ বেশী, তাই আগ্রহ বেশি প্রবাসীদের।

যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসে, সেসব দেশে কথা বলে মি. সাহার দাবির সত্যতা পাওয়া গেল।

মালয়েশিয়ায় একটি রেমিটেন্স প্রেরণকারী সংস্থায় কর্মরত মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন বলছিলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মালয়েশিয়ার স্থানীয় মুদ্রা রিঙ্গিতের মান ডলারের বিপরীতে কমে গেলেও সেটা বাংলাদেশে রেমিটেন্স কমে যাবার বড় কারণ নয়।

মূল কারণ হচ্ছে, মি. নাজিমউদ্দিনের ভাষায়, অবৈধ বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণ।

থিংক ট্যাংক পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী ড. আহসান মনসুরও বলছেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার হার বেড়েছে, অর্থও আসছে অনেক, কিন্তু সেটি বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না।

কারণ এক হিসেবে দেখা গেছে বৈধ পথের তুলনায় অবৈধ পথে লাভ বেশী, প্রতি ডলারে চার টাকা পর্যন্ত হেরফের হচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে।

ফলে বৈধ পথে আগ্রহ হারাচ্ছে প্রবাসীরা। ড. মনসুর বলছেন, “টাকা কিন্তু দেশে আসছে। ডলার আসছে না”। “এটা হচ্ছে পার্থক্যের কারণে। আমি যদি ৮২ টাকা পাই, তাহলে কেন আমি ৭৮ টাকায় পাঠাবো। মানুষের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে আমাদের সরকারের, আমাদের দেশের”।

নীতিগত সংস্কার যদি আমরা কিছু করতে পারি তাহলে আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ আবার আগের ধারায় ফিরে আসবে।

“এটা আমাদের হাতেই, আমাদের সরকারের হাতেই, সরকারকেই করতে হবে । যদি না করে তাহলে এই পতন অব্যাহত থাকবে,” বলছিলেন তিনি।

ড. মনসুর মূলত বিকল্প পদ্ধতি যেটা অবৈধ চ্যানেল বলে পরিচিত, তাদের লেনদেনের হারের সাথে বৈধ ব্যাংকিং খাতের লেনদেনের হারের পার্থক্য কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন।

অবশ্য উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কিছু কিছু সংস্কারের উদ্যোগ তারা এরই মধ্যে নিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা আদান-প্রদানকারী ব্যাংকগুলোকে প্রবাসীদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ একটু কম করে আদায় করতে বলা হয়েছে।

তাছাড়া, বাংলাদেশে অতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার অপব্যবহার করে বিদেশ থেকে যে কায়দায় অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে সেটিকেও নানাভাবে ঠেকানোর একটি উদ্যোগও আছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে