ডেস্ক রিপোর্টঃ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’র সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এবং বুয়েটের বিআরটিসি সমন্বয়ে গঠিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আজ রাজধানীতে রেল ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন- বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সুকুমার ভৌমিক এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) সেলের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) সেল, বুয়েটের বিআরটিসি সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে সেবা প্রদান করবে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ব্রড গেজ রেলপথ স্থাপন প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের বৃহৎ আকার বাজেটের একটি উন্নয়ন প্রকল্প।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার প্রদান করবে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে ১০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। সিএসসি’র জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ৬ বছর।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, বর্তমান সরকার যাত্রীদের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। এ জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালুর জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেলওয়ে সেতু, কালুরঘাটে কর্ণফুলি নদীর ওপর রোড-কাম-রেলসেতু এবং দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ঢাকা শহরে সার্কুলার ট্রেন চালুর ব্যাপারে প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া খুলনা থেকে দর্শনা ডাবল লাইন এবং পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
মো. মুজিবুল হক আশা প্রকাশ করেন, পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই যাতে ট্রেন চলাচল করতে পারে সে জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের সদস্য দেশসমূহে আন্তঃদেশীয় যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের লক্ষ্যে সুষ্ঠু রেলওয়ে কানেকটিভিটি স্থাপন হবে।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের পেট্রা-পোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল-যশোর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত কানেকটিভিটি প্রদানের মাধ্যমে বিদ্যমান ট্রান্স এশিয়ান রেলয়ের রুটের সাথে নতুন রুট হিসেবে সংযোগ স্থাপিত হবে। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সেনাবাহিনী প্রধান আশা প্রকাশ করেন, সিএসসি সেল তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরো বেশি দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, রিসেটেলমেন্ট প্লান বাস্তবায়ন ও নির্মাণ কাজ সুপারভিশন সেবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে।
সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের আওতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর কলেবর বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত টেকনোলজি সংযোজন করে স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পরামর্শক সেবার আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরের সদস্যগণ ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত নকশা যাচাই করে তার অনুমোদন প্রদান করবে। এ ছাড়া রেলপথের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, সাইট ক্লিয়ারেন্স এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমে সহায়তা ও তদারকি করবে।
দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ নির্মাণ কাজের সুষ্ঠু তদারকিসহ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যথাসময়ে কার্য সম্পাদনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দিন। এতে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে