img_20161129_124137-696x445

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নিজের কোনো জায়গা নেই। চুক্তিতে জমি নিয়ে নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে সবজি চাষ করে লাখপতি হয়েছেন কৃষক জসিম উদ্দিন (৪০)। তাঁকে অনুসরণ করে এ কাজে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। জসিমের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের বড় সলুয়া গ্রামে। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে এ অঞ্চলে এসে সবজি চাষ শুরু করেন।

তিনি নিজে লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু লেখাপড়া শেখাচ্ছেন ছেলেদের। বড় ছেলে আল আমিন এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেজ ছেলে কায়কোবাদ যশোর পলিটেকনিকে মেশিনারিজ বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে আল নাফিজের বয়স এখন সাড়ে চার বছর। জসিমের স্ত্রী রিনা বেগমও লেখাপড়া জানেন না। তবে জসিমকে রিনা সবজি চাষে সহযোগিতা করছেন। তাঁর সবজিখেতে প্রতিদিন নিয়মিত পাঁচজন নারী শ্রমিক ও একজন পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন।

সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন নারী-পুরুষ শ্রমিক জমিতে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করছেন। পাশেই খেত থেকে শিম তুলছেন জসিম। এ সময় জসিম বলেন, ‘ঢাকায় রিকশা চালানোর সময় এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সূত্র ধরে এখানে এসে প্রথমে পাঁচ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে আগাম জাতের সবজি চাষ করি। কিন্তু খরচ বাদে লাভ খুব একটা থাকত না। আস্তে আস্তে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে সবজি চাষের পরিধি বাড়াতে থাকি। এবার ছয় বিঘা জমি ৩০ হাজার টাকায় বছরের চুক্তিতে নিয়ে শিম লাগিয়েছি। আর চার বিঘা জমি আট মাসের জন্য ১২ হাজার টাকায় নিয়ে তাতে মিষ্টিকুমড়া লাগাচ্ছি। এ ছাড়া সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে একই নিয়মে ছয় বিঘা জমি নিয়ে তাতে লাউ, শিম, বরবটি ও বেগুন লাগিয়েছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রতিদিন তিনি সবজি বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে খরচ উঠে গেছে। এখন যা বিক্রি হবে, তা লাভ হবে। সবজি চাষের পরিধি বাড়াতে আরও কিছু জমি চুক্তি নেওয়ার আলোচনা চলছে। আগে আমার কাছে লাখ টাকা স্বপ্ন ছিল, এখন তা বাস্তব।’

চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কলেজছাত্র মর্তুজা হোসেন বলেন, এই এলাকায় কিছুদিন ধরে আগাম জাতের সবজি চাষ করছেন জসিম। তাঁর দেখাদেখি গ্রামের অনেকে একটু হলেও সবজি চাষ করছেন। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে চাষের কথাও ভাবছেন অনেকে। জসিমের নিজের জায়গা জমি নেই, ঠিকায় জমি নিয়ে সবজি চাষ করছেন ও ছেলেদের মানুষ করছেন। তিনি একজন আদর্শ সবজিচাষিই নন, একজন আদর্শ পিতাও।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোহসিন রেজা বলেন, জসিম একজন সফল সবজিচাষি। তাঁকে অনুসরণ করে অনেকে সবজি চাষ করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে