ডেস্ক রিপোর্টঃ আগাম ফুলকপি চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের লক্ষ্মীচাপ বিএসসিপাড়া ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষকদের। অপসারিত হয়েছে এলাকার এক সময়ের আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা। উৎপাদিত ফুলকপির আগাম বাজার ধরে তারা এখন আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী।
ওই দুই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকায় ফুলকপির আবাদ। কেউ ফসল তুলছেন, আবার অনেকে পরিচর্যা করছেন। পাশাপাশি আলু, মরিচ, মূলাসহ অন্যান্য শীতকালীন আগাম সবজি আবাদের কমতি নেই সেখানে।
লক্ষ্মীচাপ বিএসসিপাড়া গ্রামের কৃষক বিনয় চন্দ্র বর্মণ (৬২) বলেন, ১২ বছর ধরে শীতকালীন আগাম ফুলকপির আবাদ করছি। আগাম বাজার ধরে লাভ হচ্ছে ভালোই। ফুলকপি চাষের আয়ে বসবাসের জন্য তৈরি করেছি আধাপাকা বাড়ি, কিনেছি পাঁচ বিঘা জমি। বাড়িতে এখন পালন করছি গাভিসহ ৯টি গরু। গাভির দুধ নিজে খাচ্ছি, বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগাচ্ছি। এক সময়ের আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা এখন আর ছুঁইতে পারে না আমাকে।
এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। পাশাপাশি আরো তিন বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন আলুসহ অন্যান্য আগাম জাতের সবজি। ফুলকপির উঠিয়ে ওই জমিতে আবাদ করবেন বীজ আলু। এরপর সকল জমিতে আবাদ করবেন ভুট্টা।
আয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতিবিঘা জমির ফুলকপি আবাদে খরচ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘার কপি বিক্রী হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। এবার বিরূপ আবাহাওয়া থাকলেও বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকার উর্দ্ধে আয় আসবে।
একই গ্রামের কৃষক অনন্ত রায় (৩৫) বলেন, পৈত্রিক এক বিঘা জমিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে ফুলকপি চাষ শুরু করি। ওই আয়ে কিনেছি দুই বিঘা জমি, পাঁচটি গরু। এবারে চাষ করেছি দেড় বিঘা জমিতে।’
তিনি জানান, এখন অভাব নেই তার সংসারে। আয় বাড়ার পাশাপাশি সমাজে বেড়েছে তার আত্মসম্মান।
একইভারে আগাম ফুলকপির আবাদ করে ভাগ্য বদলে গেছে একই গ্রামের কৃষক সামাদ আলীর, হায়দার শেখেরও পার্শ্ববর্তী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কামাল মিয়াসহ অনেকের। তারা সবাই ফুলকপিসহ সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ওই গ্রাম দু’টি এখন পরিণত হয়েছে সবজির গ্রামে।
এলাকার কৃষকরা জানান, এলাকাটি উঁচু হওয়ায় এক সময় জমি পতিত থাকতো । গোচারণ ভুমির পাশাপাশি এসব জমি ব্যবহার হতো ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে। এখন সেই জমিতে আগাম কপিসহ অন্যান্য সবজি আবাদে লাভ বেশী হচ্ছে। এখন আর পতিত কোন জমি নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক কেরামত আলী জানান, জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে ব্যাপক হারে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি সংগলশি ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামেও আগাম জাতের মুলাসহ শাক-সবজি চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার উৎপাদিত শাক-সবজির বাজার রয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আগাম বাজারে দাম বেশী পাওয়ায় কৃষকদের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে