ডেস্ক রিপোর্ট : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশনকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
আগারগাঁয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে কমিশনকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এ পরামর্শ দেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে দুদিনব্যাপী সংলাপের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিনে ২৪জন গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশ নেন। বেলা সোয়া ১০টা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি খান মোহাম্মদ নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপে বসে।
সংলাপ শেষে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ‘দুই দিন গণমাধ্যমের মোট ৫০জন প্রতিনিধির সাথে কমিশন সংলাপ করে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে তারা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেছেন। নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে তারা কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রয়োজন আছে কী না।’ তিনি জানান, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান রাখা, পর্যবেক্ষক নিয়োগে সাবধানতা অবলম্বন, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক না করা, নির্বাচনী প্রচারে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য কর্মশালার আয়োজন, প্রার্থীর হলফনামা সঠিক দিয়েছে কী না তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করা এবং মিথ্যা তথ্য ধরা পড়লে মনোনয়নপত্র বাতিল ও শাস্তির বিধান করা, নিবন্ধিত দলগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করা, একাধিক দিনে নির্বাচন করা, ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এখনই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচনী এলাকার সীমানায় বড় কোনো পরিবর্তন না আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি। নির্বাচনে সেনা বাহিনী লাগবে নাকি আনসার বাহিনী লাগবে সেটা আমরা এখনো জানিনা। কিন্তু এতো আগে সেনা বাহিনীর কথা বলার মধ্যে কোন কু-মতলবি আছে কি-না তা আমাদের ভাবতে হবে’। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী কোনো দলকে কমিশনে নিবন্ধন না দেয়ারও প্রস্তাব করেন।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও হেড অব নিউজ শাইখ সিরাজ বলেন, নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের নিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার আগে যেন কেউ ফলাফল প্রকাশ না করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দ্রুত ফল ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে।
এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার বলেন, গ্রহনযোগ্য ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসিকে তার স্বক্ষমতা ও সাহস দেখাতে হবে এবং সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।
একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কী না সেই বিষয়ে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেউ রাজনৈতিক কারণে সেনা মোতায়েনের কথা বললেও সেনাবাহিনীকে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করে এ বাহিনীকে জনগনের মুখোমুখি করা যাবে না।
বাংলা ভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, বর্তমান বিধান অনুসারে নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে। এজন্য রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে সেনাবাহিনী তো দুরের কথা আনসার বাহিনীও প্রয়োজন হবে না।
ডিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম প্রবাসীদের ভোটার করা ও তাদের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী ব্যয় বাস্তবসম্মত করা, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের অতীত ইতিহাস যাচাই করা, পরাজিত দলের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, নিবন্ধিত দলের আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকান্ডের বাৎসরিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিধান চালুর কথা বলেন।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে থাকতে হবে। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ইসির কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে যারা নির্বাচনে আসবে তাদের সকলকে সমান সুযোগ দেয়া।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহীউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ জনগনের আস্থা অর্জন করা। তাদের সেটা করতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রয়োজন পড়বে কী না তারা নিজেরাই সেই বিষয়টি ঠিক করবেন।
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস.এম. হারুন-উর-রশীদ, আর টিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, সময় টিভির তুষার আব্দুল্লাহ, চ্যানেল ২৪ এর এডিটর ইনপুট তালাত মামুন, দেশ টিভির হেড অব নিউজ সুকান্ত গুপ্ত অলোক, নিউজ ২৪ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসনাইন খুরশিদ, এসএ টিভির বার্তা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির বার্তা সম্পাদক মাহমুদূল করিম চঞ্চল, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিদ আহমেদ, এশিয়ান টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক বিল্লাল হোসাইন বেলাল ও বার্তা প্রধান সেলিম বাশার ছাড়াও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী সংলাপে অংশ নেন।

বি/এস/এস/এন


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে