_92477576_image-0-02-06-8575ca860362f76de28e93f8319f8a70930dcbd92ce01697630ff436bf10879a-v

আন্তর্জাতিক রিপোর্টঃ গত বছর কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে ২৫ জন শ্রমিক আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে যান। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়ে তারা হেরাতে গিয়েছিলেন, সেই প্রতিষ্ঠানটি তারা যাবার দুই-তিন মাস পরেই বন্ধ হয়ে যায়।

এরপরে অনেকগুলো মাস তাদের কেটে গেছে অনিশ্চয়তায়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলেও তাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করাতো মালিকপক্ষ।

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে আটকে পড়া ওই ২৫ বাংলাদেশি বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন।

মোহাম্মদ রতন মিয়া ছিলেন, হেরাতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন।

“বাইরেতো গেছিলাম ভালোর আশায়, কিন্তু আমরাতো সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছি”- বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে বলছিলেন মো: রতন মিয়া। তিনি বলেছেন কিভাবে আফগানিস্তানের হেরাতে বসবাসকারী অবৈধ শ্রমিক হয়ে পড়লেন তারা।

গত বছর ১০ই অক্টোবর হেরাতে যান মো: রতন মিয়াসহ ২৫ জন। মূলত সেখানে একটি ইস্পাত কারখানায় কাজের উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলেন তারা।

কিভাবে সেই কারখানায় শ্রমিকের কাজ পেলেন তাঁরা?

রতন মিয়ার সাথে আলাপকালে জানা গেল, বাংলাদেশের ঢাকায় একটি কারখানায় রামপ্রসাদ রয় নামের ভারতীয় এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। ওই নাগরিক রতন মিয়াসহ বিভিন্ন ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের ভালো চাকরি ও বেতনের প্রলোভন দেখান। এই ২৫ জনকেও ভালো চাকরির আশা দিয়ে আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে পাঠানো হয় ওই ভারতীয় নাগরিকের উদ্যোগে।

সেখানে গজরা এলাকায় একটি ইস্পাত কারখানায় চাকরিও দেওয়া হয় , আর এই কাজ পাওয়ার জন্য রামপ্রসাদকে ভিসার কাজ ও যাতায়াত খরচ হিসেবে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা করে দিয়েছেন একেকজন- জানিয়েছেন রতন মিয়া।

কিন্তু যে ভিসা নিয়ে গিয়েছেন সেই ভিসা নবায়ন হবে এবং সেখানে থাকতে পারবেন বহু বছর- এই বিশ্বাস নিয়েই সেখানে কাজে যান এই বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।

কিন্তু হেরাতে যাবার দুই মাস পর ওই ইস্পাত কারখানাই বন্ধ হয়ে যায়। যদিও কারখানার নানাবিধ কাজ তাদের দিয়ে করানো হতো বলে জানান রতন মিয়া।

“টাকার সমস্যা বলে কাজ বন্ধ হলো, আমাদের বেতন বন্ধ হলো। এমনিতে উৎপাদন না হলেও বিভিন্ন কাজ করাইতো , মাল টানাটানি, কারখানা পরিস্কার এসব কাজ করাইতো। ওই হিসেবে প্রায় এগারো মাসের বেতন পাই আমরা”-জানান রতন মিয়া।

কারখানার তিন তলাতেই এই বাংলাদেশি শ্রমিকদের রাখা হতো এবং তাদের কারখানার বাইরে যেতে দেওয়া হতো না বলে জানান রতন মিয়া।

তবে বিভিন্ন সময় মালিকপক্ষ দেখা দিয়ে গেলেও এবং খাবার-দাবার দিলেও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছিল তাদের।

রতন মিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী “তারা খাওয়া দিতেছিল, কিন্তু অনেক কম। না খাওয়ায়ে মারে নাই। আবার ঠিকমতো খাওনও দেয় না। বাইরে বের হইতে পারতাম না, যদি আমরা পুলিশে খবর দেই এই ভয়ে হয়তো। আবার আমরাও গুলি খাওনের ভয়ে বের হইতাম না”।

কিন্তু দিনে দিনে তাদের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, অনেকের পরিবার তাদের ওপরেই নির্ভরশীল থাকায় তারা বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। তাদের মোবাইল জব্দ করা হয়নি এবং কয়েকজন আফগান ব্যক্তি ফোনে করতে সাহায্য করেছে বলে জানান রতন মিয়া।

অনেকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা চালানোর পর এবং ফেসবুকে নিজেদের কথা তুলে ধরার পর তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম।

প্রায় এক বছর আফগানিস্তানের হেরাতে অনিশ্চিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে খুশী কুড়িগ্রামের রতন মিয়া জানালেন “জীবনেও আর বিদেশে যাবার চিন্তা করবেন না”।

তবে কুড়িগ্রামের বেলগাছা গ্রামের রতন মিয়ার পরিবারের তারই ওপর নির্ভর করে দিন চলতো, আর বিদেশে পাড়ি জমানোর কারণে যে ক্ষতি আর অর্থকষ্টের মধ্যে তাদের পড়তে হয়েছে সেখান থেকে কিভাবে উঠে দাড়াবেন সেই ভাবনাতেই এখন আছেন রতন মিয়া।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে