করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫০ জনে।
এছাড়া দেশে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ২১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩১। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও ৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে বাসা থেকে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ সময় অধিদপ্তর থেকে যুক্ত হন।
অধ্যাপক আজাদ জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ‘সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করি এবং ডা. মঈনের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। আমি আমাদের সবার পক্ষ থেকে তাকে সমবেদনা জানাই। ডা. মঈন দুই সন্তান রেখে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বিষয়টি জানানোর পর তিনি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং একই সঙ্গে আশ্বস্ত করেন যে, মরহুমের পরিবারের সব দায় দায়িত্ব সরকার নেবে। প্রধানমন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে যে বীমা এবং অন্যান্য সুবিধা ঘোষণা করেছেন, মরহুমের পরিবার যেন দ্রুত সেটা পায়, সেই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন বাংলাদেশ সরকার সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর পাশে আছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখবে। এই বিষয়ে আরও সুরক্ষা ব্যবস্থা যা দরকার সরকার তা গ্রহণ করবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ চিকিৎসকের মৃত্যুতে মনে হচ্ছে আমরা আমাদের ভাইকে হারালাম। সহযোদ্ধাকে হারালাম।’
তিনি বলেন, সরকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মঈন উদ্দিনের পরিবারের দায়িত্ব নেবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তার পরিবারের পাশে আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন এবং নিহত চিকিৎসকের পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেছেন। ডা. মঈনের পরিবারকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী যারা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সবার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন।’
বুলেটিন উপস্থাপনকালে ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে দুই জন রয়েছেন, একজন ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আরেকজন হচ্ছেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যালের চিকিৎসক। এই চারজনের মধ্যে পুরুষ তিন জন এবং নারী একজন।
তিনি আরও জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৮টি। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪০টি। মোট ১৪ হাজার ৮৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকালের তুলনায় যা কিছুটা কম। কারণ এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের রিপোর্ট আমাদের হাতে আসেনি। এই জন্য আমাদের আজকের পরীক্ষার সংখ্যা কম দেখাচ্ছে। হয়তো ইতোমধ্যে রিপোর্ট হয়ে গেছে, আমরা আপডেট ওয়েবসাইটে জানাবো।
তিনি জানান, নতুন করে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরে ও ময়মনসিংহে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে ৭১ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৪৩৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২০ জন এবং এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪৬২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ১১ হাজার ২২৮ জনকে ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ৫৪২ জনকে। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৮০৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ৩ হাজার ১০৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মোট কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৭০ জন এবং এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪ হাজার ৯৬৯ জন। ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৬৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৫৮০ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩৬ হাজার ৭৬০ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২ হাজার ৬২৯ জন এবং সর্বমোট কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২৯ হাজার ৩৮৯ জন।
তিনি জানান, নতুন করে মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ১ জন নারী। এদের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২ জন ও সত্তরোর্ধ্ব ২ জন। ২ জনের মধ্যে ১ জন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন ও অপরজন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ছিলেন।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর’র হটলাইন নম্বরে এ পর্যন্ত ২৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৯৯ জন ফোন করে পরামর্শ ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় সেবা নিয়েছেন ১ লাখ ২ হাজার ৮৩৭টি জন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১১৭ জন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৮০৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর’র হটলাইনগুলোতে জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২৫৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৩ জনকে স্কেনিং করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৯৪টি। বিতরণ করা হয়েছে ১৪ লাখ ১৬ হাজর ৬১৬টি। গত ২৪ ঘন্টায় সংগ্রহ হয়েছে ১৫ হাজার ৪শ’টি এবং বিতরণ হয়েছে ৭২ হাজার ২শ’। এখন মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩২২টি।

B/S/SN

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে