2016_04_20_13_35_11_PJPZj4az3f7zlZzrpJkkvcaOb6xQq1_original

বিডি নীয়ালা নিউজ(২০ই এপ্রিল১৬)-আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনঃ ইরাকের আরো লাখো মানুষের মতো দারিদ্র্যের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছোট ছোট চার সন্তানের মা ওম হোসেনের পরিবারও। হৃদরোগ আর ডায়াবেটিকের সমস্যা নিয়ে বেকার দিন কাটাচ্ছেন তার স্বামী।

গত নয় বছর ধরে পরিবারের উপার্জনের একমাত্র ভরসা ওম। গৃহপরিচারিকার কাজ করেন তিনি। কিন্তু এখন আর পারছেন না। কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। স্বাস্থ্য একেবারেই ভেঙে পড়েছে ওম হোসেনের।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের পূর্বাঞ্চলে এক শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী একটি বাড়িতে বাস করেন ওম। তিনি বলেন, ‘আমি ক্লান্ত। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা,বাচ্চাদের প্রয়োজন পূরণ এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য দরকারি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে না আমাদের পক্ষে।’

কয়েক মাস আগে ভেঙে পড়েছিল তাদের বাড়িটি। বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়দের সহায়তায় তখন সেটি মেরামত করেছিলেন তারা।

ওমের স্বামী হোসেন বলেন,‘এক সময় আমি সব জায়গায় কাজ করেছি- কসাই হিসেবে, দিনমজুর হিসেবে এমনকি টোকাই হিসেবেও। আমি কারো কাছে টাকাও চাইতাম না, খাবারও চাইতাম না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে লোকদের ফেলে দেয়া রুটি রাস্তা থেকে সংগ্রহ করতে বলতাম। আমরা তা-ই খেতাম। কারো কাছে খাবার কিংবা টাকা চাইনি।’ এক পর্যায়ে দারিদ্র্যের সাথে আর না পেরে নিজের জন্য ক্ষতিকর একটি সিদ্ধান্ত নেন ওম। নিজের একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।বাংলা মেইল থেকে পাওয়া খবর।

2016_04_20_13_35_08_1VQl06DKLnZnTQEfONL7ANPiiO0jbh_original

ওমের ভাষায়, ‘আমি আমার কিডনি বেচে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। প্রতিদিন দৈহিক পরিশ্রম এবং করুণার ওপর বেঁচে থাকার চেয়ে এটা অনেক ভালো।’ একজন অবৈধ কিডনি ব্যবসায়ীর কাছে নিজের কিডনিটি বিক্রি করতে যান ওম। কিন্তু সেখানেও হয় সমস্যা। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিস্থাপনের উপযোগী নয় তার কিডনি। হতাশ হয়ে আরো মারাত্মক একটি সিদ্ধান্ত নেন ওম।

নিজের নয় বছরের ছেলের দিকে ইশারা করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্দশাগ্রস্ত এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের ছেলের একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই। আমরা সব করতে পারি কিন্তু ভিক্ষা করতে পারি না। পৃথিবীতে কেন আমাদের এই পরিস্থিতি?’

শুধু ওম হোসেনের পরিবার নয়, এই পরিস্থিতি এখন বাগদাদে খুব সাধারণ। দারিদ্র্যের শিকার হয়ে অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন নিজের কিডনি। বিশ্বব্যাংকের ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইরাকের তিন কোটি জনগণের ২২.৫ শতাংশই ভয়াবহ দারিদ্র্যের শিকার।

একেকটি কিডনির জন্য তাদের দেয়া হয় ১০ হাজার ডলার (সাত লাখ ৮২ হাজার টাকা)। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারের একটি গোপন ব্যবসা গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। আর এই ব্যবসার লক্ষ্য মানুষের দারিদ্র্যকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া।

বাগদাদের মানবাধিকার আইনজীবী ফিরাস আল বায়াতি জানান, দিন দিন বেড়েই চলেছে কিডনির অবৈধ এ ব্যবসা। কর্তৃপক্ষ এটা মোকাবেলা করতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘গত তিন মাসে এমন ১২ জনের সাথে আমার কাজ করতে হয়েছে, যাদের কিডনি বিক্রির কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী তাদের দারিদ্র্য।’

অবৈধভাবে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি ঠেকাতে ২০১২ সালে একটি আইন হয়েছে ইরাকে। আইন অনুসারে, পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে শুধু আত্মীয়রাই একজন অন্যজনকে কিডনি দান করতে পারবে। তবে তা কোনো কাজে আসছে না। সহজেই জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে অপরকে কিডনি দানের নামে তা বিক্রি করা যায়। তাছাড়া এক্ষেত্রে চিকিৎসকরাও সহায়তা করে থাকেন। সরাকারি হাসপাতালগুলোর চেয়ে কিডনির অবৈধ ব্যবসা বেশি হয় বেসরকারি হাসপাতালে। কারণ আইন-কানুন সেখানে অনেকটা শিথিল।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে