ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকায় শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী সংসদ সদস্যদের সংগঠন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর সম্মেলন। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা আর তাতে নারীর অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সম্মেলনে।

বলা হচ্ছে, এত বড় আন্তর্জাতিক আয়োজন বাংলাদেশ এর আগে কখনো করে নি। কিন্তু এমন একটি সময়ে এটি আয়োজন হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের এখনকার সংসদ নিয়েই রয়েছে বিতর্ক। ১৩২টি দেশ থেকে আসা সাতশোর বেশি এমপি ও পার্লামেন্ট স্পিকার অংশ নিচ্ছেন আইপিইউর এই অ্যাসেম্বলিতে। রয়েছেন নানা সংস্থার প্রায় এক হাজারের মতো পর্যবেক্ষক।

নানা দেশের সরকারি দল বা বিরোধী দলের এমপিরা অভিবাসন, যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা পরিবেশ বিপর্যয় এমন নানা সব ইস্যুতে পাঁচদিন ধরে আলাপ করবেন। নরওয়ের প্রগ্রেস পার্টির তিনবারের এমপি কেনেথ স্ভেন্দসেন বলছেন, এরকম আয়োজন একে অপরের কাছ থেকে শেখার সুযোগ করে দেয়।

সম্মেলনে যোগ দিতে আসা কয়েকজন এমপি
                     সম্মেলনে যোগ দিতে আসা কয়েকজন এমপি

তিনি বলছেন, “আমার মনে হয়, এখানে যখন আমরা বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করবো তখন একে অপরের অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে, একে অপরের কাছ থেকে শেখার সুযোগ হবে, সুযোগ হবে গণতন্ত্রের ভাল চর্চাগুলো জানার।”

কিন্তু মিস্টার স্ভেন্দসেন যে গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলছেন সেটি বাংলাদেশে কতটা রয়েছে? বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে দেশটির অন্যতম প্রধান দল বিএনপি সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নি। আর সব দল অংশগ্রহণ না করায় সেই নির্বাচনটিই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

সংসদে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয় এরকম ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩ টিতে কোন নির্বাচন ছাড়াই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন সংসদ সদস্যরা। ঐ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী মতের উপস্থিতি নেই। সুইডেনের দা সোশাল ডেমোক্র্যাটস পার্টির এমপি থেরেস লিনবার্গ বলছেন, একটি কার্যকর গণতন্ত্রে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী মত খুবই জরুরী।

মিজ লিনবার্গ বলছেন, “গণতন্ত্রে এটা খুবই জরুরী যে একটি নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল যেমন থাকতে হবে তেমনি একটি শক্তিশালী বিরোধী দলও থাকতে হবে। রাজনীতির মাধ্যমেই কিন্তু জনগণ তার মত প্রকাশ করে। বিরোধী মতাদর্শ না থাকলে সেই গণতন্ত্র কার্যকর হয় না।”

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদ কতটা কার্যকর সেনিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এসব ইস্যুতে বাংলাদেশকে বেশ প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ডেপুটি চিফ হুইপ ডরিস লাগুট্টে বলছেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করার দায়িত্ব শুধু সরকারি দলেরই নয়।

তার মতে, “যে দলটি সরকারে থাকবে তার কাজ হলো নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী নানা ধরনের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা। আমার অভিজ্ঞতা হলো বিরোধী দলগুলো সবকিছুর শুধু বিরোধিতাই করে। তারা সরকারি দলের শুধু সমালোচনাই করে যায়। যদি তারা কোন অর্থবহ ভূমিকা পালন না করে যাতে জনগণ লাভবান হবে তাহলে তাদের গুরুত্ব থাকে না। অর্থবহ অবদান রাখলে তবেই তো তাদের কথা শোনা যায়।” আইপিইউর এর বর্তমান সভাপতি, বাংলাদেশের সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।

সম্মেলন চলছে ঢাকায়
                       সম্মেলন চলছে ঢাকায়

তিনি অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ও সংসদ নিয়ে যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলো বাংলাদেশ সেটি এখন দেশটি কাটিয়ে উঠেছে। তিনি বলছেন, “আমার মনে হয় না এসব নিয়ে আর কোন প্রশ্ন আছে। কেউ এই সম্মেলনে এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আমি বলবো না যারা বাংলাদেশে এই সম্মেলনটা করছে তারা গণতন্ত্র নিয়ে ভাবে না। অবশ্যই ভাবে। আমরা এখন আগামী নির্বাচনকে কিভাবে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত করতে পারি সে দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি।”এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের কাছ থেকেও এমন নির্বাচনের আশাই শোনা গেলো।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে