মোঃ আসাদুজ্জামান পাভেল, ডিমলা (নীলফামারী) থেকেঃ নীলফামালী জেলার ডিমলা উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়নে হঠাৎ করে ২ দিনের দমকা বাতাস ও বৃষ্টিতে আমন ধান ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো ডিমলা উপজেলায় পাকা এবং আধাপাকা ও কাঁচা ধান ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
গেল গত ২ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ডিমলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডিমলা সদর ইউনিয়ন সহ সব কয়টি ইউনিয়নে অর্ধশত একর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। ধানের শীষ আসার পূর্ব মুহূর্তে এমন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। ডিমলা সদর ইউনিয়নের কৃষক মমিনুর রহমান,জুয়েল ইসলাম জানান, তিনি জমি আবাদ করেন। বন্যায় একবার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। এখন প্রতিটি ধান গাছের শীষ আসার মুহূর্তে বাতাসে মাঝে মধ্যে ক্ষেতের ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। আসছে মৌসুমে পরিবার-পরিজন নিয়ে কী খেয়ে বাঁচবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না কৃষক।

এদিকে বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী,ঝুনাগাছ চাপানী,পূর্বছাতনাই,পশ্চিম ছাতনাই, বালাপাড়া, নাউতারা, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নসহ সবকটি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত একর জমির ফসল মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বন্যার আঘাতের পর আবারও বাতাসে ফসলের এমন অবস্থায় কৃষকরা হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব হোসেন,নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো সব শ্যাষ, ঋণ নিয়া জমিতে ধান লাগাইছি, এহন ধান না হইলে ক্যামন করি ঋণ শোধ করমো,খামো কী ? গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আবু কালাম, আজিজার জানান, ‘বানে খাইলে একবার, ঝড়ে খাইল আর একবার। এলা হামার কপালে কী আছে!’ খালিশা চাপানী ইউনিয়নের মোঃ দুলু,খয়বর জানান, যেভাবে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে গেছে এসব ধানগাছ কেটে গবাধি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে দুই দফা বন্যার হাত থেকে আমন ধানের ক্ষেত রক্ষা করতে পারলেও নিম্নচাপ প্রভাবে গত শুক্রবারের দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে মাটিতে মিশে গেছে ডিমলার কৃষকের স্বপ্ন। শুক্রবার দিবাগত রাতে বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় ধান ক্ষেত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। কৃষকরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় সার ও পরিচর্যার মাধ্যমে আমন ক্ষেত রক্ষা করতে সমর্থ হন ডিমলা উপজেলার শত শত কৃষক বন্যার পানির সঙ্গে আসা পলিতে বেশ মোটা তাজাই হয়ে উঠেছিল আমনের ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ উঠতি আমনের ক্ষেত মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পানিতে পড়ে যাওয়ায় এসব ধান চিটা হয়ে যাবে বলে কৃষকদের আশঙ্কা।

এলাকার কৃষক আমির হোসেন,ফারুক,নুর ইসলাম,বেলাল,আঃ সালাম,ডাক্টার মহসীন আলী জানান, খুব বেশি হলে ১২-১৫ দিনের মধ্যে ধান ঘরে তুলতে পারতাম আমরা। এ সময় হঠাৎ এ বাতাস তাদের ধান গাছ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এবারও একই পরিণতি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগও মিলছে না তাদের। মধ্যসুন্দর খাতা ,রামডাঙ্গার সবজি চাষি রোস্তম,দুলাল,সহিদুল মাস্টার জানান, এ বৃষ্টি আর দমকা হওয়ায় জমির বেগুন, করলা, লাউ, শীম, শাক-সবজির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। ডিমলা উপজেলার কৃষিবিদ কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ন কবির বলেন, কী পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার এখনও হিসাব নেওয়া সম্ভব হয়নি জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনও পর্যবেক্ষণ করছি।’ এ অবস্থায় করণীয় কী, জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি তারা যেন কয়েকটি ধান গাছ একত্রে করে খড় বা সুতলী দিয়ে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখে। তাতে ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে না থাকলে তেমন ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে