আসাদুজ্জামান পাভেল, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: তিস্তা নদীর বুকে প্রকৃতির নিয়মে জেগে ওঠে দ্বীপচর। জেগে ওঠা চরেই বসবাস করে চরাঞ্চলবাসী যুগের পর যুগ। প্রকৃতির নিয়মেই বিলীন হয়ে যায় সেই জেগে ওঠা দ্বীপ চরগুলি। প্রকৃতির এই নিয়মে কপাল পুড়ে দ্বীপচরে বসবাসকারী চরাঞ্চলবাসীদের।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত ও দোহলপাড়া মৌজার একাংশে তিস্তানদীর বুক চিওে জেগে ওঠেছে দ্বীপচর। এই চরে দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর ধরেই বসবাসকরে আসছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। প্রতিবছরেই বর্ষা মৌসুমে তিস্তার জোয়ার ভাটার খেলায় মেতে উঠে যৌবনা তিস্তা। তারই ধারাবাহিকতায় এবারে উজানের পাহাড়ী ঢলে আর ভারী বর্ষনের ফলে তিস্তায় দেখায় যায় জোয়ার। জোয়ারের পানিতে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ডাঁন ও বাঁমতীরে প্রবাহিত হয়ে একটি তিস্তা দুই দিকে দুইটি নদী সৃষ্টি হয়ে প্রবাহিত হলে কিসামতের মৌজাটি একটি দ্বীপচরে পরিণত হয়। এভাবেই কাটছে এই দ্বীপচরের বাসিন্দাদের জীবন বহুবছর ধরেই। কিন্তু এবারের আকর্ষিক জোয়ারে তিস্তা যৌবন ফিরে পেয়ে ছুটতে থাকে দিকবিদিক। দ্বীপচরটি খন্ড খন্ড করে ছোট বড় ১১ টি চ্যানেল বের হয়ে যায়। এ কারনে পুরোচরটিই এখন খন্ড খন্ড অংশে পরিনত হয়েছে। যে কোন সময় তিস্তায় জোয়ারের পানির তোড়ে ভেসে যেতে পারে পুরোচরটিই বলে দাবী স্থানীয়দের।
ইতিমধ্যেই তিস্তায় জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় কিসামতের চর ও দোহলপাড়া চরের একাংশ বিলীন হয়ে যায় তিস্তা নদীর বুকে। নদী ভাঙ্গনের ফলে চরটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ২৩ পরিবারের বাড়ীঘর জায়গাজমি বিলীন হয়ে যায় নদী গর্ভে। এবারেই আবারো তিন্তার জোয়ার আসলে পানির তোড়ে ভেসে যেতে পারে তিস্তার বুকে থাকা পুরো দ্বীপচরটিই। ফলে কিসামতের দ্বীপচরটি এখন বিলীনের প্রহর গুনছেন চরাঞ্চলবাসী। দ্বীপচরটি রক্ষায় তড়িৎ গতিতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের। গত শুক্রবার ঐ দ্বীপচরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যে কোন সময় কোন মুর্হুতেই তিস্তার জোয়ারের পানিতে ভেসে যেতে পারে চরটি। নদীর কুল নাই কিনার নাই নাইরে ভরসা। হতাশা আর জীবনের চরম দূর্ভোগ ও বিপর্যয়ের কথা ভেবে প্রতিনিয়ত নিদ্রাহীন রাত্রি অতিবাহিত করছে তিস্তার গর্ভে থাকা এসব দ্বীপচরবাসী। চরাঞ্চলে বসবাসকারী আরো ৩ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ী বিলীনের আশংকায় রয়েছে চরবাসীগণ বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি খগাখড়িবাড়ী ই্উপির সদস্য আজিজুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, ২০ হাজার গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত চরাঞ্চলে বসবাসকারীরা। তিনি আরো কিছু নৌকা লাইফ সেফটি জেকেট বরাদ্দের অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। তিনি দাবী জানিয়ে বলেন অতিদ্রুত কিসামতের দ্বীপচরে একটি পিরামিড বা কিল্লা স্থাপন করা না হলে যে কোন সময় ভেসে যাবে চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজন ও গবাদিপশু ।
একান্ত আলাপচারিতায় খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জানান, সম্প্রতি দুই দফা বন্যায় তিস্তার জোয়ারের পানিতে কিসামতের দ্বীপচরটির পেট চিরে বয়ে গেছে তিস্তার ১১টি চ্যানেল। যে কোন মূহুর্তে উজানে ঢলে তিস্তায় বন্যা দেখা দিলেই স্রোতের তোড়ে ভেঁসে যাবে কিসামত ছাতনাই ও দোহলপাড়া মৌজার দ্বীপচরটি। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে চরাঞ্চলে বসবাসকারী ৩ শতাধিক বাড়ীঘর। আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে পরিবার গুলো। সম্প্রতি বন্যায় তিস্তার গতিপথ এবারে ভিন্ন ভবে প্রবাহিত হচ্ছে। চরটিতে সৃষ্টি হয়েছে ১১ টি চ্যানেল। ফলে যে কোন সময় বিলীনের আশংকায় রয়েছে চরবাসী। হুমকীর মুখে পড়েছে তিস্তার এই দ্বীপচরটি। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে