প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে করোনার প্রতিরোধক টিকার আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। প্রথমপর্যায়ে উখিয়া ও টেকনাফের ৫৬টি কেন্দ্রে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া হবে।

আগামী ১০ আগস্ট ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। আর টিকাদান কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে সব রোহিঙ্গাকে টিকার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছে সচেতন মহল।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকেই  স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে ক্যাম্পে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বালাই নেই। যার কারণে করোনার প্রকোপ শুরু হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে উদ্বেগ ছিল সর্বমহলের।

কিন্তু করোনার প্রথম ঢেউয়ে ক্যাম্পে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা রোধ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই হাজারের উপরে, মারা গেছেন ২৯ জন।

কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনতে আগামী ১০ থেকে ১২ আগস্ট তিনদিন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হবে। এতে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দেওয়া হবে। প্রত্যেককে সিনোফার্মের প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হবে। রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের টিকা দেওয়ার জন্য ক্যাম্পে ৫৬টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৫৮টি টিকা প্রয়োগকারী দল কাজ করবে। প্রতিটি দলে দুজন টিকাদানকারীর বিপরীতে থাকবেন তিনজন স্বেচ্ছাসেবক।

টিকা নিতে আগতদের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা বুঝতে সহযোগিতা করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বর দেওয়া হয়েছে। মূলত এ নম্বরের মাধ্যমে তাদের টিকা দেওয়া হবে। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ৫৬টি কেন্দ্রে টিকাদান শুরু করা হবে। যেখানে উখিয়ায় থাকছে ৪৪টি এবং টেকনাফে থাকছে ১০টি টিকাদান কেন্দ্র। প্রথমে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রথমে টিকা প্রদান করা হবে।

তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) থেকে ক্যাম্পে টিকাদান শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া হবে। এ জন্য ক্যাম্পগুলোতে ৫৬টি টিকা কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গার ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বর রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে তাদের টিকা দেওয়া হবে।

আর কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথম ডোজ দিতে যদি ৩ দিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয় তাহলে তা করা হবে। বৃষ্টির জন্য ক্যাম্পের রাস্তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চলাচলে সমস্যা হয়। এসব কারণে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সবার সঙ্গে সমন্বয় করে টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সব সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ক্যাম্পে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা প্রদান করা হবে।

সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্য ১৯ হাজার ২৯৭ জনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ২ হাজার ৬৫৪ জন শরণার্থী। এখন পর্যন্ত জেলায় ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য ২৯ জন রোহিঙ্গা ছিল। যারমধ্যে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোর ২৭ জন ও টেকনাফ ক্যাম্প ২ জন রোহিঙ্গা।

এদিকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের টিকা প্রদানকে স্বাগত জানিয়েছে কক্সবাজারের সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, অল্প সংখ্যক স্থানে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। তার ওপর রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে বেশি। ফলে রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দেরও করোনাভাইরাস আক্রান্তের ঝুঁকি থেকেই যায়। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের টিকা প্রদানের যে উদ্যোগ তা প্রশংসনীয়। কিন্তু ৪৮ হাজার টিকা পর্যাপ্ত নয়। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এগিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত টিকা প্রদান জরুরি বলে মনে করছি।

প্রথম দফায় প্রথম ডোজ নেওয়া ৪৮ হাজার রোহিঙ্গার নির্ধারিত সময়ের পর দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। এর জন্য প্রস্তুতি রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে