ডেস্ক রিপোর্টঃ টাঙ্গাইলের সবর্ত্র মাঠে মাঠে সরিষা গাছের হলুদ ফুলের সমারোহ। দেখে সবারাই মন ভরে যায়। সরেজমিন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বৈল্লা, গালা, এনায়েতপুর, ভাটচান্দাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। শীতের কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চাষীরা সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। সবারই সরিষা আবাদ করা শেষ। এখন অপেক্ষা ঘরে তোলার।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, রাস্তার দুপাশের জমিগুলোতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। আর যখন যানবাহন করে রাস্তা দিয়ে যাওয়া হয় তখন সবারই চোখ জুড়িয়ে যায়। বাতাসে দুলে এসব সরিষার ফুল। আর এই দোল খাওয়া সবার মন কেড়ে নেয়। সরিষার ক্ষেতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লুকোচুরি খেলতেও দেখা যায়।

কৃষকরা বলেন, আমন ধান ওঠার পর বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত জমি ফাঁকা থাকে। তাই শাক-সবজির পাশাপাশি সরিষার আবাদ করে থাকেন তারা। প্রতি বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় দুই থেকে ৩ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৬ মণ সরিষা উৎপাদন হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় ভাটচান্দা গ্রামের সরিষা চাষী আফসার আলীর সাথে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমি এবছর ৩ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আমি দেশি জাতের সরিষা আবাদ করেছি। এতে আমার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা তোলার সময়ও আরো কিছু টাকা খরচ হবে। আশা করছি সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এবার ১২ মণ সরিষা উৎপাদন হবে হলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, আমি ৪ বছর ধরে সরিষা চাষ করছি। ধানে ক্ষতি হলেও সরিষা চাষে কোন ক্ষতি নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কমবেশি সবাই লাভবান হন। গত কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া অনুকূলে আছে। সরিষায় পোকা-মাকড় কম ধরে।

তিনি বলেন, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই সরিষায় ফলন আসে। বাজারে সরিষার দামও ভালো। কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হন। আর এতে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, গতবছর আমি সরিষা চাষ করে ১২ মণ সরিষা পেয়েছিলাম। ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। গতবছর আমি লাভবান হয়েছিলাম। আশা করছি এবারও আমি সরিষা চাষ করে লাভবান হবো।

কথা হয় আরেক সরিষা চাষী শাহ আলমের সাথে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমি প্রায় ১২ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। এতে আমার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি প্রতি বিঘায় ৪ মণ করে সরিষা পাবো। এতে আমার ৯০ থেকে ৯৬ হাজার টাকার মতো সরিষা বিক্রি হবে।

সরিষা চাষী মজিদ মিয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। বাজারে দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি গরুর ভালো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সরিষার নাড়া জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।  আমি এবার প্রায় প্রায় ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিধপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৩৭৯৮৫ হেক্টর জমিতে।

টাঙ্গাইল জেলায় বারি ১৪, ১৫, ৯, টরি ৭, সম্পদ ইত্যাদি জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিধপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেমের সাথে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, এবার টাঙ্গাইল জেলায় সরিষার ভালো ফলন হবে। কারণ এবছর সরিষায় কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। বাজারে সরিষার দামও ভালো এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। এতে করে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, এবার টাঙ্গাইলে সরিষার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা মৌ বক্স স্থাপন করছে। মৌমাছি থাকার ফলে ২০ ভাগ পরাগায়ন বেড়ে যায়। আর এতে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। তাদেরকে এ ব্যাপারে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন পাওয়া যায়। সরিষার আবাদের পরে কৃষকরা বোরো ধান আবাদ শুরু করবেন।

পি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে