আক্ষেপ থেকে গত মার্চ মাসের ২৬ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন চাকমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যেই আমার মারা যেতে হবে।’

অবশেষে তার আক্ষেপই সত্য হলো। ক্যান্সারে আক্রান্ত এই শিক্ষার্থী ফুসফুসজনিত রোগে সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেও করোনাভাইরাসের ভয়ে চিকিৎসা দেয়নি কোনো হাসপাতাল। ফলে বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয় তার।

খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার আগালাশিং পাড়ার দাতকুপ্যা গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাহাড়ি জীবনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বড় স্বপ্ন বুকে নিয়ে।

কিন্তু আড়াই বছর পরই অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালের জুন মাসে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সমাজের নানা শ্রেণীর বিত্তবানদের সহায়তায় চিকিৎসাও নিতে থাকেন তিনি। বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে ভারতের বেশ কিছু হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যান তিনি। ক্যান্সারের কারণে ঘাড়ে ও পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর ওষুধের জন্য ভারতের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা যায় তাকে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় করোনাভাইরাস। দেশেই চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যায় সুমনের। হাসপাতাল আর চিকিৎসকদের ফিরিয়ে দেয়ার দুঃখ প্রকাশ করে তিনি গত ২৬ মার্চ সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমার করোনা হয়নি অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যেই আমাকে মারা যেতে হবে।’

সুমনের সেই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো ১১ দিন পার না হতেই। চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে প্রাণ হারাতে হলো এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে।

তার ঘনিষ্ঠ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আসিফ আলম ফেসবুকে সুমনকে নিয়ে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘কদিন আগেই শেষ কথা হয়েছিল সুমনের সাথে। অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল সুমন। ফুসফুসে টিউমার নিয়েও জীবন যুদ্ধে হাল ছাড়েনি। ঢাকা ও ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আবার আইইআরে ফিরেছিল হাসিমাখা ঐ মুখটা। আইইআরের প্রতিটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুমনের এই লড়াইয়ের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী।

করোনায় আর দশজনের মতন সুমনও উৎকণ্ঠায় ছিল। কিন্তু এই করোনা নিয়ে ওর সর্বশেষ আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেল। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা পায়নি। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ফুসফুসের ব্যাধি নিয়ে হার মানে সুমন। বিনা চিকিৎসায় এভাবে সুমন চলে যাবে, কে ভেবেছিলাম! কাউকে কিছু না জানিয়ে এমন নিশ্চুপ প্রস্থান, মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে। ক্ষমা চাইবেন? কোন মুখে? ‘

সুমন চাকমার বাবা সুপেন চাকমা বলেন, আজ সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে সুমন মৃত্যুবরণ করেছে।

S/K/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে