ডেস্ক রিপোর্টঃ গ্যাস খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে সহজ শর্তে এশীয় উন্নয়ন তহবিল (এডিএফ) থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেবে এডিবি। আর অর্ডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর) তহবিল থেকে আসবে অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার। সব মিলে বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা দেবে এডিবি।
এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঋণচুক্তি করেছে সংস্থাটি। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন ও এডিবির পক্ষে সংস্থার ঢাকায় নিযুক্ত আবাসিক মিশন প্রধান কাজুহিকো হিগুচি ঋণচুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে এডিবির সহায়তার অর্থ ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্স মিশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিটিসিএল) ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল)। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হবে। এডিবি ছাড়াও এ প্রকল্পে নবগঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৬ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। সব মিলে এ প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা আসবে ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অবশিষ্ট ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
চুক্তির আওতায় এডিবি প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামো এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা দেবে। তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রে ওয়েলহেড গ্যাস কমপ্রেসার স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চট্রগ্রাম থেকে ফেনি হয়ে বাখরাবাদ পর্যন্ত ৩৬ ইঞ্চি সমান্তরাল ১৮১ কিলোমিটার গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন ক্ষমতা বাড়ানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
বর্তমান ১৭৫ কিলোমিটার ২৪ ইঞ্চির প্যারালালের বাখরাবাদ-চট্রগ্রাম গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহের কারণে চট্রগ্রামের কিছু এলাকায় কখনো কখনো গ্যাস সংকট দেখা দেয়। নতুন গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের ফলে দেশের প্রধান বন্দর নগরী চট্রগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশে দারিদ্র দূর করতে প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এডিবি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন দক্ষতা ব্যাপক হারে বাড়বে। গ্যাস বিতরণের অবকাঠামো সম্প্রসারণেও ব্যয় হবে প্রকল্পের অর্থ। এআইআইবির আগামী বোর্ড সভায় প্রকল্পের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন পাবে বলে আশা প্রকাশ করছে এডিবি।
এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দ্রুত বাড়ছে। তবে বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তরল জ্বালানীতে নির্ভরতা বাড়ছে। তা ছাড়া গ্যাসের মজুদও ক্রমেই কমে আসছে। এ অবস্থায় সরকার চাহিদা পূরণে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের জ্বালানী চাহিদা পূরণে বাড়তি গ্যাস সরবরাহে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ভ’মিকা রাখবে বলে মনে করেন এডিবি দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানী বিষয়ক অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ হুংওয়ে জং।
এডিবি জানায়, প্রকল্পটির আওতায় সাতটি কমপ্রেসার বসানো হবে। এর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাসে গ্যাসের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি এর আওতায় চট্টগ্রাম থেকে বাকরাবাদ পর্যন্ত ১৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৪৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চুক্তি অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এডিবির ঋণের রেয়াতকাল ৫ বছর। ২৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবে সরকার। এডিএফ ঋণের সুদহার বছরে ২ শতাংশ। তবে কঠিণ শর্তের ওসিআর ঋণে সুদহার লন্ডন আন্তব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে উঠানামা করবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ব্যয় না হলে ওসিআর ঋণের শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট চার্জ পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে থাকছে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে