কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুর জেলায় ৫৮ হাজার খামারে প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ গরু-ছাগল। কয়েক বছর ধরে গরু মোটাতাজা করেছেন জেলার খামারিরা। আশায় ছিলেন এবার কোরবানির ঈদে গরু বেঁচে খামারকে আরও অনেক বড় করবেন। কিন্তু ঈদের আগেই সর্বাত্মক লকডাউনে ভেঙে গেছে সেই আশা। বেশি দাম পাওয়া দূরে থাক, সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সেই শঙ্কায় আছেন তারা।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কমকতা ডা. আশিকা আকবর তৃষা জানান, গত বছর কোরবানির সময়ে করোনা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে খামারিরা যেন লোকসানে না পড়ে এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে ‘অনলাইন পশুরহাট’ নামে একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বেচা কেনা যাবে। গত বছর কোরবানিতে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার পশু কেনাবেচা হয়েছে।প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, জেলায় ৫৮ হাজার ৫৫টি খামারে প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার  ৭৮৩টি কোরবানির পশু। এর মধ্যে গরু এক লাখ ২৪ হাজার ২১৬টি ও ৭৪ হাজার ৫৬৭টি ছাগল। আসন্ন কোরবানিতে জেলার চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ২৬৮টি পশু। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৫৪ হাজার ৫১৫টি পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব।এদিকে শতাধিক গরু নিয়ে মোটাতাজা করেছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের বাকালীপাড়া গ্রামের গো-খামারি মো. আলম হোসেন।দুশ্চিন্তায় আছেন তার মতো আরও অনেক খামারি। সবার আশঙ্কা, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষ এবারও পশু কোরবানি কম দেবে। এতে হাটে পশু বিক্রিও কম হবে, যার প্রভাব পড়বে গরুর দামে।কথা হয় খামারি আলমের সাথে। চিন্তিত এই খামারি বলেন, ‘লালন-পালন করা গরুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। গরুকে প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি কুঁড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এতে একটি গরুর পেছনে দিনে খরচ পড়ে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এরই মধ্যে মোট ১০০টি গরুর পেছনে প্রায় ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। দাম না পেলে বড় লোকসান হবে। আর যদি এবার বিক্রি না হয়, তাহলে প্রতিদিন যে খরচ হয় তাতে সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’গরু খামারিরা জানান, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরু মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আগ্রহী কোনো ব্যাপারির দেখা নেই। এছাড়া কোরবানির আগ মুহূর্তে জমজমাট হাট বসার সম্ভাবনাও নেই বললেও চলে। এ কারণে গরু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।ঈদে পশু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও খরচ কিন্তু থেমে নেই খামারিদের। বেড়েই চলেছে পশুখাদ্যের এই খরচ। আব্দুল ইউনিয়নের গো-খামারি শাহীনুর ইসলাম বলেন, ছয় মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল এক হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৩০০ টাকা। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি, করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪২ টাকা দরে। শুধু গমের ভুসি ও খৈল না, সব রকম গোখাদ্যের দাম গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। গরু খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার আশঙ্কায় ও হতাশায় রয়েছি।ঈদের আর মাত্র ২০ থেকে ২১ দিন বাকি। ব্যবসা করতে না পারায় আক্ষেপ আছে ব্যাপারিদের মধ্যেও। আরেক গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সব থেকে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাস ধরে নিয়মিত হাট বসতে পারছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তে হাট বসার সম্ভাবনা খুবই কম।’

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে