মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে নানী-নাতিনী। এ ঘটনায় অপর এক নাতনী বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।

উপজেলার পৈলনপুর গ্রামের নাদির ইসলামের স্ত্রী মোছা. মিতু আক্তার বলেন, পৈলনপুর গ্রামের আঞ্জু মিয়ার ছেলে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মো. ছোটন মিয়া এলাকায় মাদক বিক্রি করে যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ায় তার মামা কাতার প্রবাসী রাতুল আহম্মেদ মিঠন ও মো. রিপন মিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে ছোটন মিয়াকে বাঁধা নিষেধ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩১ আগষ্ট মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে ছোটন মিয়া তার ফুফাত বোন কুলিয়ারচর পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ইয়াছমিন বেগমের নেতৃত্বে দলবলসহ দেশীয় অস্ত্রধী নিয়ে তার মামা কাতার প্রবাসী রাতুল আহম্মেদ মিঠন ও ঝুমা বেগমের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়িঘরসহ আসবাবপত্র ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় বাঁধা নিষেধ দিতে গেলে হামলাকারীরা মিতু আক্তারে নানী হোসনে আরা বেগম ও ছোট বোন কুলিয়ারচর বেগম নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আলমিন আক্তারসহ ঝুমা বেগম, লিটন মিয়া ও সোয়াইব মিয়াকে মারধোরসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে চলে যায় । পরে এলাকাবাসী আহতদের মধ্যে হোসনে আরা বেগম ও আলমিন আক্তারকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিনে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গুরুতর আহত হোসনে আরা বেগম ও আলমিন আক্তার কুলিয়ারচর সরকারি হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এঘটনায় মোছা. মিতু আক্তার বাদী হয়ে ঘটনার দিন পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ইয়াছমিন বেগম ও মাদক ব্যবসায়ী মো. ছোটন মিয়া সহ ১৮ জনের নামে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ দাখিলের পর থানার কর্তব্যরত এসআই কাউসার এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেন।

এব্যাপারে পৈলনপুর গ্রামের মৃত নূরুল হক ভূয়ার পুত্র কাতার প্রবাসী রাতুল আহম্মেদ মিঠন বলেন, প্রতিপক্ষ আঞ্জু মিয়ার পুত্র ছোটন মিয়া এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাকে মাদক ব্যবসায় বাঁধা নিষেধ দিলে সে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্রাদীসহ দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে দুটি ঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর করে ঘরে থাকা নগদ টাকা স্বর্ণালংকার চারটি ছাগল ও একটি এলইডি টিভি লুট করে নিয়ে যায়। বাঁধা নিষেধ দিতে গেলে আমার মা সহ ৫জন আহত হয়। এঘটনার নেতৃত্ব দেয় ছোটনের ফুফাত বোন কুলিয়ারচর পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ইয়াছমিন বেগম।

এঘটনায় লিটন মিয়ার স্ত্রী ঝুমা বেগম বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ছোটন এবং মহিলা কাউন্সিলর ইয়াছমিনের লোকজন দলবল ও দেশী অস্ত্রধী নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত ভাবে হামলা চালিয়ে আমার ঘর বাড়ি ভাংচুর করে। এসময় তাদের বাঁধা দিলে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে ঘরে থাকা নগদ টাকা, ছাগল, স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও আমার বৃদ্ধা শ্বাশুড়ী হোসনে আরা বেগম ও ননদের মেয়ে সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী আলমিনকে মারধর করে মারাত্মক জখম করে। তারা বর্তমানে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে কুলিয়ারচর পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ইয়াছমিন বেগম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। উভয় পক্ষের মারামারির ঘটনাটি ইতিমধ্যে কুলিয়াচর পৌরসভার মেয়র সাহেবকে অবগত করা হয়েছে। তিনি আশ্বস্থ করে বলেছেন মারামারির ঘটনাটি মীমাংসা করে দেওয়া হবে।

এব্যাপারে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার এস আই কাউসার সাংবাদিকদের বলেন, উক্ত ঘটনায় মিতু আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে