মাফি মহিউদ্দিন কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ  নীলফামারীর  রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় ঋণ গ্রহীতা ও গ্রাহকরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষকদের ঋণ দেবার নামে জনপ্রতি ২০ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগে ইতোমধ্যে ব্রাঞ্চের ক্যাশিয়ার খাদেমুল ইসলামকে বদলী করা হলেও শাখাটির প্রিন্সিপাল অফিসার দিলীপ চন্দ্র পোদ্দারের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ফলে হয়নারীর শিকার আরো ৭ জন গ্রাহক ব্যাংকটির রংপুর বিভাগীয় জোনাল ম্যানেজারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। 
অভিযোগে দেখা যায়,রূপালী ব্যাংকের এই শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার দিলীপ চন্দ্র পোদ্দার ও ক্যাশিয়ার খাদেমুল ইসলাম বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও ব্যবসায়ীকে ঋণ দেবার কথা বলে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেয়। কিন্তু টাকা নেবার পরেও ঋণ দেয়ার কোন পদক্ষেপ নেননি। টাকা ফেরৎ চাইলে উল্টো নানান ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করছেন। এ ব্যাপারে এলাকার হারেজ আলী, আবু তালেব ও সেকেন্দার আলী রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। 
এ ছাড়াও সাধারণ গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা জমা বা উত্তোলন করতে গেলে ৫ বা ১০ টাকার নোট দিয়ে হয়রানি করেন। এ ঘটনায় চলতি বছরের গত ২৬ জানুয়ারী শাখাটির ক্যাশিয়ার খাদেমুল ইসলামকে  দিনাজপুর জেলার রানীরবন্দর ব্রাঞ্চে বদলী করা হয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কিন্তু শাখাটির প্রিন্সপাল অফিসারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আরো ৭ জন গ্রাহক ব্যাংকটির রংপুর বিভাগীয় জোনাল ম্যানেজারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এই ৭ গ্রাহকের অভিযোগে দেখা যায়  মেসার্স মণি ভুষণ ট্রেডার্সের মালিক মণি ভুষণ রায়  ২০১৫ সালের ২৬ আগষ্ট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করে তা কিস্তি মাফিক ২০১৯ সালের মে মাসে পরিশোধ করে দেন। নতুন করে ঋনের জন্য আবেদন করলে তার কাছে কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে। মণি ভুষণ রায়  জানান আমি তাঁকে চার হাজার টাকা দেই। আমাকে ঋণ দেয়ার নামে ব্যাংকটির ১৩ জন ষ্টাফ আমার বাড়িতে দুপুরে জোড় করে দাওয়াত খায়। তাদের সেই খাবার খাওয়াতে আমার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। নতুন করে ঋনের আমার ৭ মাস অতিবাহিত হলেও তারা আমাকে আজ কাল করে ঘুরাচ্ছে। কিন্তু ঋণ প্রদান করেননা। বর্তমানে আমি ব্যবসায়ীকভাবে কঠিন সমস্যায় রয়েছি।   
ব্যবসায়ী  মজিদুল ইসলাম মিন্টু একই কথা জানিয়ে বলেন রূপালী ব্যাংকের কিশোরীগঞ্জ শাখার সকল কর্মকতার্ কর্মচারীরা অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যে জড়িয়ে গেছে। তাদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক শাস্তিমুলক অপসারন জরুরী প্রয়োজন। 
ছায়েদ হোসেন ট্রেডার্সের মালিক  আমজাদ হোসেন , কবির ট্রেডার্সের মালিক কবির হোসেন , মেসার্স লালমিয়া ট্রেডার্সের মালিক লালমিয়া, হাসানুর রহমান, আনায়ারুল হকসহ অসংখ্য গ্রাহকের একই অভিযোগ করেন। এছাড়াও সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী ৪ শ টাকার উপরে বিদ্যুৎ বিল জমা নিলে গ্রাহক কপিতে  ১০ টাকা মুল্যের রাজস্ব টিকেট লাগানোর কথা থাকলেও ব্যাংক কতৃপক্ষ তা না লাগিয়ে সরকারী রাজস্বের টাকা পকেটে পুড়ছে। ইতিমধ্যে গত ২৭ জানুয়ারী বিদ্যুৎ বিলে রাজস্ব ফাঁকির  শিরোনাম দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।  
এ বিষয়ে ব্যাংটির সাবেক ক্যাশিয়ার বর্তমানে দিনাজপুর জেলার রানীরবন্দর  রুপালী ব্যাংক শাখায় কর্মরত বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল সেটি মিথ্যা অভিযোগ ছিল। 
এ ব্যাপারে রুপালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার দৌলতুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান অনিয়মের অভিযোগ যেহেতু হয়েছে, সেহেতু আমি কোন কথাই বলতে পারবোনা।  এ ছাড়া ব্যাংকের কোন তথ্য আমি দিতে পারবোনা। তথ্য নিতে হলে আপনাদের ব্যাংকের প্রধান শাখা ঢাকার পাবলিক রিলেশন শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। 
এখানে উল্লেখ যে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী কিশোরগঞ্জ রূপালী ব্যাংক শাখার গ্রাহক ও ঋণ গ্রহীতা ও কত টাকা ঋন প্রদান করা হয়েছে এবং পিএল খাতে কতজন ঋন নিয়েছে তার তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনের নিধার্রিত ফরমে শাখার ব্যবস্থাপকের নিকট আবেদন করা হয়েছিল। ওই আবেদনের পর ওই দিনের তারিখ উল্লেখ করে ব্যাংক ব্যবস্থাপক ডাকযোগে এর উত্তরে জানায় গোপনীয়তা রক্ষায় বাধা স্বরূপ উপরোক্ত ১ ও ২ নং কারন এবং তথ্য অধিকার আইন .২০০৯ এর ৭(ঙ) (ই) এবং ৭(জ) নং ধারা মোতাবেক প্রার্পিত তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হইল না।
এ ব্যাপারে রুপালী ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার শরিফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ক্যাশিয়ার খাদেমুল ইসলামকে কি কারনে বদলি করা হয়েছে সেটা ব্যাংকের অভ্যান্তরীন বিষয়। অপর অভিযোগের বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন অভিযোগটি পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। 
এদিকে নীলফামারী ৪ ( কিশোরীগঞ্জ-সৈয়দপুর) আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল জানান কিশোরীগঞ্জ রূপালী ব্যাংক শাখার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আমি ব্যাংকের প্রধান শাখা ঢাকায় উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে