মোঃ কাওছার হামিদ, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) থেকেঃ  নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নৃত্য শিল্পী শরীফ মিয়া (২১) এখন গোট দেশ নৃত্যের তালে মাতিয়ে তুলে চলেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে,২০১৩ সালের মার্চ মাসে শরীফ মিয়া অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় স্বপ্ন নিয়ে নৃত্য জগতে প্রথম পা রাখেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখান থেকেই তার নাচের চেষ্টা শুরু।

কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য পরিচালক জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নেওয়া নৃত্য শিল্পী রাজু আহম্মেদ মায়ার আঁচলে আবদ্ধ করে নিয়ে শরীফকে নৃত্যের হাতে খড়ি দেন। শরীফ কারণে অকারণে গুরু রাজু আহম্মেদ’র সাথে লেগেই থাকতেন। আর ওস্তাদ রাজু আহম্মেদও তার স্নেহের ছায়ায় শরীফ মিয়াকে জায়গা করে দিয়ে গড়ে তুলেছেন এক আদর্শ নৃত্য শিল্পী হিসাবে। কখনো রাগ,শাসন বারণ ও ভালবাসা দিয়ে শরীফকে নৃত্য শেখাতেন রাজু আহম্মেদ। অনেক সময় নিজের খাবারকে ভাগ করে শরীফকে খাইয়ে দিতেন এই উদার মনের ওস্তাদ রাজু আহম্মেদ। রাজু আহম্মেদের কাছ থেকে নাচ শিখিয়ে প্রথমে নীলফামারীতে সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ২০১৩ সালে নাচে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং জাতীয় পর্যায়ে নৃত্য সংস্থার প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার লাভ করেন শরীফ মিয়া। তার নাচে নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমির আয়োজক ও দর্শকদের মাতিয়ে তুলে গোটা দেশ বাসীর মাঝে ঝড় তুলে দেন শরীফ হোসেন। সেখান থেকে শরীফ মিয়ার প্রতি আরও বেশী করে নজর দেন প্রশিক্ষক রাজু আহম্মেদ।

১৯৯৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের ফরুয়া পাড়া গ্রামের নয়া মিয়া মেম্বারের ঘরে জন্ম গ্রহন করেন শরীফ মিয়া। তার বাবা গত ২০১১ সালের শেষের দিকে মারা যান। মা শরিফা বেগম কোনমতে সংসার চালিয়ে আসছেন। ২ভাই ২ বোনের মধ্যে শরীফ হোসেন সবার বড়। শরীফ মিয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য করে যে অর্থ উপার্জন করেন তা থেকে নিজের পড়ালেখা,প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ও পরিবারের লোকজনদের সহযোগীতা করে আসছেন।

শরীফ মিয়া কিশোরীগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এস এস সি ও বি কে জেড থেকে ২০১৫ সালে এইচ এস সি পাশ করেন।
বাবা নেই, সংসারে টাকা নেই তবুও শরীফ মিয়া অদম্য ইচ্ছা আর মনোবল থেমে নেই। তার চেষ্টা ও তার গুরুজনদের নির্দেশনায় শরীফ তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়েই যাচ্ছেন। তার শিক্ষা গুরু রাজু আহম্মেদের মাধ্যমে শরীফ মিয়া উপজেলা, জেলা ও বিভাগের গন্ডি পেরিয়ে যখন জাতীয় পর্যায়ে স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন ঠিক সেই মুহুর্তে ২০১৫ সালে ঢাকার নৃত্য সংস্থার শিল্পী সংগঠন নন্দন কলা কেন্দ্রে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক এম আর ওয়াসেকের সাথে পরিচয় করে দেয় শরীফ মিয়া।

প্রশিক্ষক এম আর ওয়াসেকের হাতে শরীফ মিয়াকে তুলে দিয়ে সমস্ত দায়ভার তুলে দেন ওয়াসেকের হাতে। আর প্রশিক্ষক ওয়াসেক তাকে ছেলে হিসাবেই আদর মাখা ও সোহাগ বুলানো হাত দিয়ে শরীফ মিয়াকে স্বপ্নের সিড়িতে তুলে দিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শরীফ মিয়া শিক্ষক হিসাবে নাচ শিখিয়েছেন রাজু আহম্মেদ, এম আর ওয়াসেক, বেলায়েত হোসেন খান, রনি, শফিক, মোহন, আজাদ হোসেন। নৃত্য শিল্পী শরীফ মিয়া নিত্য নতুন ভাবে শারিরীক কসরতের মাধ্যমে নৃত্য শিখিয়ে বিভিন্ন নাচের অনুষ্ঠানসহ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও কয়েকটি বে-সরকারী টিভি চ্যানেলে নাচের স্বাক্ষর রেখেছে।

শরীফের ইচ্ছা বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা নৃত্য শিল্পী হয়ে বিশ্বের কাছে তার প্রতিভার স্বাক্ষর স্থাপন করতে চান। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গুনিজনদের সহযোগীতার প্রসারিত হাতের ছোঁয়া পেলে বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে স্বপ্নের এ ডিজিটাল বাংলাদেশকে।
এ ব্যাপারে নীলফামারী-৪আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন,শরীফ নিঃসন্দেহে একজন ভাল আর্টিষ্ট। তার প্রতিভার বিকশিত হউক রন্ধ্রে রন্ধে।

রংপুর বিভাগীয় কাউন্সিল অব ভোক্তা অধিকার’র নির্বাহী সদস্য মানিক লাল দত্ত ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থা নীলফামারী জেলা শাখার উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক মানিক লাল দত্ত বলেন, শরীফ নীলফামারীর এক গৌরব উজ্জল নক্ষত্র। সে সরকারী ভাবে সুযোগ সুবিধা পেলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশকে তাক লাগিয়ে দিবে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবুল বলেন, শরীফ আমাদের কিশোরগঞ্জ বাসীর জন্য অহংকার। তার জন্ম কিশোরগঞ্জ উপজেলায়,তার শিক্ষা ভিত্তি কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এবং সে নাচের হাতে খড়ি কিশোরগঞ্জে। আমি শরীফের উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।

এ বিষয়ে শরীফ মিয়া বলেন,আমি বাবা হারা এক সন্তান। আমার বাবাকে ছোট বেলায় আমরা হারিয়েছি। আমার মা এখন উৎসাহ দেয়ার একমাত্র সম্বল। আমার শিক্ষক রাজু আহম্মেদ আমাকে ছোট ভাইয়ের মত করে আদর ভালবাসা, শাসন ও শিক্ষা দিয়েছে। বাবার মত করে ওয়াসেক স্যার আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।

অন্যান্য প্রশিক্ষকরা আমাকে যে পরিমান সহযোগীতা করেছে তা আমার সারাজীবনের জন্য খুটি হিসাবে কাজ করবে। আমি প্রতিটি সময় নেশা ও পেশা, ধ্যান জ্ঞান আমার একটাই। আমার সাধনা যেন আল্লাহ পূর্ণ করে দেয়। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমার ইচ্ছা আমি যেন বিদেশে গিয়ে নাচের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করতে পারি এবং দেশকে উপহার হিসাবে কিছু দিতে পারি।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে