আন্তর্জাতিক রিপোর্টঃ মার্কিন নির্বাচনের প্রচারাভিযান চলার সময় অনেকগুলো ওয়েবসাইট গজিয়ে উঠেছিল যেখান থেকে নিয়মিতভাবে ভুয়া খবর প্রচার করা হতো।
এইসব সাইটগুলোর মালিকানা খুঁজতে গিয়ে বিবিসি জানতে পেরেছে এর অনেকগুলোই পরিচালনা করা হতো পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট এক দেশ ম্যাসিডোনিয়া থেকে।
এই ওয়েবসাইটগুলিতে চটকদার মিথ্যে খবর প্রচার করে কিছু তরুণ প্রচুর অর্থ কামিয়েছে।
গোরান (ছদ্মনাম) ১৯ বছরের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। ম্যাসিডোনিয়ার এক সাইবার ক্যাফে থেকে তিনি তার ভুয়া খবরের সাইট চালান।
“আমেরিকানরা আমাদের তৈরি ভুয়া নিউজগুলো খুব পছন্দ করেছে, আর আমরাও সেগুলো থেকে ভাল টাকাপয়সা আয় করেছি।” কব্জিতে বাঁধা দামী ঘড়িটি নাড়াচাড়া করতে করতে বলছিলেন তিনি। “খবরটি সঠিক না মিথ্যে তা কে দেখতে যায়?”
গোরান জানালেন, ম্যাসিডোনিয়ার এক শহর ভেলেস-এ তার মতো শত শত তরুণ রয়েছে যারা ভুয়া নিউজ সাইট তৈরি করাকে অনেকটা কুটির শিল্প বানিয়ে ফেলেছে।
মার্কিন নির্বাচনে প্রচারাভিযান চলার সময় তারা ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ভুয়া খবর তৈরি করে এই সাইটগুলো থেকে প্রচার করেছে।
যেভাবে তৈরি হয় ভুয়া খবর
গোরান এই কাজ শুরু করে গত গ্রীষ্ম মৌসুমে।
মূলত ডানপন্থী আমেরিকান ওয়েবসাইটগুলো থেকে নানা ধরনের নিবন্ধ ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ করে তিনি তার ‘নিউজ’ তৈরি করেন।
এরপর ফেসবুককে কিছু অর্থ দিয়ে সেই নিউজটি তিনি পোস্ট আকার যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক ইউজারদের লক্ষ্য করে প্রচার করেন। ডনাল্ড ট্রাম্পের খবর জানার জন্য তার অনুসারীরা যখন সেই খবরের পোস্টে ক্লিক করেন, বা লাইক করেন এবং সেটি শেয়ার করেন তখন সেই পোস্টে যে বিজ্ঞাপন থাকে তা থেকে গোরানের পকেটে অর্থ ঢোকে।
তিনি জানান, এভাবে তিনি এক মাসে ১৫০০ ডলার পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন।
তবে তিনি বলছেন, তার বন্ধুরা এর চেয়েও অনেক বেশি অর্থ কামিয়েছে। কেউ কেউ প্রতিদিন হাজার হাজার ডলারও আয় করেছে।
কিন্তু এভাবে ভুয়া খবর প্রচার করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছে কিনা, এই প্রশ্নে জবাবে গোরান বললেন, “আমেরিকানরা কিভাবে ভোট দেবে না দেবে তা নিয়ে ছেলেপেলেদের কোন মাথাব্যথা নেই। তারা শুধু দেখেছে তারা টাকা কামাতে পারছে কি না, আর সেই অর্থ দিয়ে দামি দামি পোশাক আর মদ কিনতে পারছে কি না।”
ম্যসিডোনিয়ার আইনে আমেরিকান ওয়েবসাইট নকল করে ভুয়া নিউজ তৈরি করা কিংবা তা প্রচার করা ঠিক বেআইনি নয়।
কিন্তু পুরো ব্যাপারটার সাথে নৈতিকতার একটা সম্পর্কে রয়েছে।
এই ভুয়া খবরের কারখানার ব্যাপারে যখন ভেলেস-এর মেয়র স্লাভকো চেডিয়েভকে জিজ্ঞেস করা হয় তাখন তিনি বলেন, তার শহরে কোন কালো টাকা নেই।
তবে তিনি একই সাথেকে ভেলেস-এর তরুণদের সৃজনশীলতারও প্রশংসা করেন।
বি/বি/সি/এন