সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে রক্তের বন্যা বইছে মিয়ানমারের রাজপথে। শনিবার অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ১১৪ জনকে হত্যা করেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সামরিক জান্তার লেলিয়ে দেয়া নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে পাখির মতো লোকজনকে হত্যা করছে।

শনিবার দেশটির সশস্ত্রবাহিনী দিবসে রাজধানী নেপিদো, বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিওসহ আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে৷ বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালালে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে৷

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি এক শিশু এবং স্থানীয় একটি অনুর্ধ্ব ২১ ফুটবল ক্লাবের সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে৷

নিহতের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ দেশটিতে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেন ‘নিরস্ত্র মানুষ ও শিশু হত্যার এ বিষয়টি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়৷’ মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে এমন অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও৷

গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় নিহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ।

রাজধানী নেপিদোতে শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেডে অংশ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, ‘দেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সামরিক বাহিনী। অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, আগের মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো থেকে আপনাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, আপনাদের মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এই হুমকির মাধ্যমে আসলে নিরাপত্তাবাহিনীকে রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ডা. সাসা এক অনলাইন ফোরামে বলেছেন, ‌‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজ লজ্জা দিবস। তারা তিন শতাধিক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পর আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করছে।’

BD/P

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে