ডেস্ক রিপোর্টঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ বিকেলে রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশে সরকারের দু’জন সিনিয়র সচিব তাদের বক্তৃতায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বজুড়ে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশও জাতি গঠনে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তারা বলেন, মানবতা ও নিপীড়িত মানুষকে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে যুগে যুগে উজ্জীবিত করবে।
এরআগে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পৃথক আনন্দ শোভাযাত্রাসহকারে এ সমাবেশে যোগ দেয়।
এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশের শুরুতেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারের সময় সমাবেশস্থল ‘যেন ফিরে যায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ৩টা ২০ মিনিটে’। ১৯৭১ সালে ব্ঙ্গবন্ধু একইস্থানে ঠিক একই সময়ে এই ভাষণ দিয়েছিলেন।
সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের পর-পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃতকারীরা যে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই জন্য সবাইকে সব সময় সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মর্ম কথা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে তার উদ্যোগ নিতে হবে।
এ উপলক্ষে আজ রাজধানীসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আনন্দ মিছিল, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রদর্শন করা হয় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের মিশনসমূহেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হয়।
সমাবেশে শফিউল আলম বলেন, ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃিত দেয়ার সরকার এই কর্মসূচি উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই স্বীকৃতি সমগ্র জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি হচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ট ভাষণ। স্মৃতিময় এই স্থানে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয়বাংলা ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল। এখানেই পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে আত্মসপর্মণ করেছিল। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এখানেই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছিলেন।
৭ মার্চের ভাষণের এই ঐতিহাসিক স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে দুপুর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ রমনা পার্কে অবস্থান নেন। সমাবেশে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, বিশিষ্ট রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, ক্রিড়াবিদ, শিক্ষার্থীগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও তথ্য মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কার্যালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কার্যালয় একইভাবে সমাবেশ তদারকি করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করে।
গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে