kandhore_uthabosa11

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৭ই মে১৬)-স্টাফ রিপোর্টারঃ  ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের সামনে জনসম্মুখে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। এরপর সেই শিক্ষককে পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করা হয়।

একই সঙ্গে স্কুলের ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি সেলিম ওসমান।

গত শুক্রবার (১৩ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানন্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এমপি নিজে উপস্থিত থেকে এসব কর্মকাণ্ডের তদারকি করেন।

এলাকাবাসী জানান, গত ৮ মে সকালে স্কুলে আসার পর দশম শ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলের ভেতরে একত্রে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এসময় প্রধান শিক্ষক তাদের মধ্যে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শাস্তি দেন। এসময় ওই শিক্ষক ছাত্রটিকে ‘ইবলিশ’ বলে গালি দেন এবং ধর্ম নিয়েও কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় এলাকা কয়েক হাজার নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে স্কুলের ভেতরে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিতরা তাকে গণপিটুনি দিয়ে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বন্দর থানা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কালাম স্কুলের ভেতরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন। এরমধ্যে স্কুলে এসে উপস্থিত হন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম নুরুল আমিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ফাঁসি দাবি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বহিষ্কার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে দুপুর আড়াইটায় বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে জানান। তখন এমপি মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের শান্ত থাকতে বলেন এবং তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। তখন এলাকাবাসী শান্ত হয়ে স্কুলের ভেতরে অবস্থান করতে থাকেন।

পরে বিকেল ৪টায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হোন সেলিম ওসমান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান।

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্থানীয় প্রশাসন ও অভিযুক্তের সাথে কথা বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দিয়ে স্কুলের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি  ভক্তকে বরখাস্থের চিঠি পাঠানো হয়। শিক্ষক নিয়োগের নামে অর্থ গ্রহণ, স্কুলে অনুপস্থিত ও দেরি করে আসার কারণ দেখিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চিঠিতে শ্যামল কান্তি ভক্তকে উদ্দেশ করে লেখা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে আনিত নিম্ন বর্ণিত অভিযোগসমূহ অদ্যকার পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়।
১। আপনি ছাত্রদের উপর শারীরিক নির্যাতন করেন।
২। বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকুরী দেওয়ার নাম করে অর্থ গ্রহণ করেছেন।
৩। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
৪। বিদ্যালয়ের ছুটি ব্যতিরকে অনুপস্থিত থাকেন এবং প্রায়ই দেরি করে বিদ্যালয়ে আসেন।

পূর্বেও এসব অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে এবং আপনাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু আপনি এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হননি। তাই ১৩ মে ম্যানেজিং কমিটির সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

এদিকে,হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরখাস্ত করার চিঠি পাওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করে বলেন,‘এসবের কোনোটাই সত্য না। এসব কিছুর পক্ষে ছিলাম না বলেই আজ এতো আপমান অপদস্ত হতে হয়েছে।’

https://youtu.be/iO9kvmIGZVI

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে