ডেস্ক রিপোর্ট  : ঈদের পরই মাঠ চাঙ্গা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক মাস বিরতির পর আবার দেশজুড়ে সাংগঠনিক সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সরকারের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরতে তৃণমূলে ঘরে ঘরে যাবেন বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের পাশাপাশি একাদশ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। পুরোদমে চালানো হবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সদস্যপদ নবায়ন। নিরসন করা হবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু কঠোরভাবে মনিটরিং করার পাশাপাশি জেলায় জেলায় জনসভায় অংশ নেবেন। সবকিছুই করা হবে হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  সংসদ নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি থাকলেও জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে দল। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতা কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। গত আট বছরে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে দলের সর্বস্তরে গা-ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে এখন দলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য আগামী নির্বাচনের আগে ১০ শতাংশ ভোট বাড়ানো। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতায় থাকতে হলে এবং আগামী দিনে ক্ষমতায় আসতে হলে দলকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এজন্য গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর নেতারা জেলা সফর করছেন। পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ জেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর অংশ হিসেবে গতকালও সিরাজগঞ্জ জেলা নেতাদের নিয়ে ধানমন্ডিতে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে সিরাজগঞ্জ পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এক মাসের মধ্যে গঠন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি গাজী আমজাদ হোসেন মিলনের সঙ্গে তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হকের দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের সর্বস্তরের ঐক্য সুদৃঢ় করা এবং সকল পর্যায়ে প্রাণসঞ্চারের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা সফরে যাবেন। এ ছাড়া সরকারের সাড়ে আট বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখতে এবং কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত ও সংগঠনের অভ্যন্তরে বিরাজমান স্থবিরতা কাটিয়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশ সফর করতে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সফরের সময়সূচি এবং কখন কোন জেলায় সফর করবেন তার দিনক্ষণ নির্ধারণের কাজ শুরু করেছেন। এর আগেই কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে রমজান মাসকে বিশেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এ সময়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে দলটির। এ ছাড়া রয়েছে কর্মিসভা, প্রতিনিধি সভা, গণসচেতনতা বাড়ানোসহ গণসংযোগ কর্মসূচিও। থাকছে উঠান বৈঠক, পথসভা, বর্ধিত সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রতিদিন ইফতার অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীর মধ্যে সখ্য বাড়ানোর জোর চেষ্টা চলছে। ঈদের পর দলকে আরও সুসংগঠিত করতে জোরদার কর্মসূচি পালন করা হবে। সবকিছুই মনিটরিং করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে এরই মধ্যে কিছু কৌশলও হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেমন নেতা-কর্মীদের আচরণে পরিবর্তন আনা।

আচরণগত সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে শোভন আচরণ করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরার কথাও বলা হয়েছে। এজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা নেতাদের একটি তথ্যচিত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো জেলা-উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে মানুষের সামনে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে আরও বেশি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় নেতারা ঈদের পর মাঠে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জনসমর্থন ও ভোট বাড়ানোর জন্যও বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় জনসমর্থন ও ভোট বাড়ানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। ’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পরই সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন। এখন রমজানের কারণে সাংগঠনিক সফর না করা হলেও ইফতার রাজনীতির মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। সে সময় দলকে সুসংগঠিত করতে কী কী করণীয় তাও বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের পর কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলা সফর করবেন। ইতিমধ্যে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করতে দলের এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী। আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোর নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলা হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো দ্রুত নিরসন হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলার নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা ধারাবাহিক বৈঠক করবেন। এর মাধ্যমে দল আরও চাঙ্গা হবে।’

ব/দ/প

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে