rice

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারীতে রোপা আমন ধানের এবার বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে আছেন কৃষকরা। কৃষকরা আশা করছেন, অতীতের সব লোকসান কাটিয়ে এবার উঠতি ধানে লাভের মুখ দেখবেন তারা। টুপামারী ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের ধান চাষী মো. খোকন (৩৫)বলেন, ‘শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দৈনিক ৪শ’ টাকায়ও মিলছেনা শ্রমিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই হতাশ হয়ে স্কুলগামী ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রী পরিজন দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। ছোটখাট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, শিল্প কলকারখানা ও নানান কাজে শ্রমিকরা সম্পৃক্ত হওয়ায় এবং অধিক লাভের আশায় অন্যত্র যাওয়ায় শ্রমিকের সংকট বেড়েছে।’

সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া (সরকার পাড়া) গ্রামের কৃষক মো. বাবুল হোসেন (৪০) হাসি মুখে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে লোকসান হচ্ছিল। তবে এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে, বাজারও ভালো। তবে ধান সংগ্রহের মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার আর লোকসান হবেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছি। চলছে ধান কাটার কাজ।’ বাবুলের মত জেলায় অনেক কৃষক এবার চলতি মৌসুমে আশার আলো দেখবেন ও অধিক মুনাফা ঘরে তুলবেন রোপা আমন ধান আবাদ করে।

উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দোনদরি গ্রামের চৌধুরী পাড়ার মো. মুসা চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বীজ তলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এবার আশা করছি, বিঘা প্রতি প্রায় ১২ মন ধান পাবো। বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ টাকায়। তাই হিসাব অনুযায়ী বিঘা প্রতি লাভ হবে ১২ হাজার সাতশ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘ধান বিক্রি করে ছেলে মেয়ের জন্য নতুন জামা, জুতা, বই, খাতা, কলম কিনবো।’

জেলা সদরের টুপামারী, রামনগর, কচুকাটা, কুন্দুপুকুর, পলাশবাড়ী. লক্ষিচাপ, পঞ্চপুকুর ও চড়াইখোলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ধান কাটার চিত্র। শ্রমিকরা ধানের ভাঁড় বা বোঝা কাঁদে নিয়ে দলে, দলে ফিরছেন জমির মালিকের বাড়ীর উঠানে।

নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের ভাঙ্গা মাল্লি এলকায় ১২ জনের দল নিয়ে ধান কাটতে দেখা গেল। দলের নেতা আতিকুল ইসলাম শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিদিন ৪শ’ টাকা মজুরিতে ধান কাটছি আমরা। গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কেউ রিকশা চালাচ্ছে, আবার অনেকেই জেলার বাহিরে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে।’

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বালাইমুক্ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকরা এবার ধানের ফলনের পাশাপাশি, লাভের মুখও দেখবেন।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলী শের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার রোপা আমন ক্ষেতের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। থেমে থেমে আকাশের বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ যেন, আমন ধানের যতেষ্ট উপকার হয়েছে। ধান ফলনের ক্ষেত্রে তেমন ক্ষতির মুখে পড়েনি কৃষকরা।’

নীলফামারী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) গোলাম মো. ইদ্রিস জানান, ‘জেলায় এক লাখ ১২ হাজার ৪৭ হেক্টর জমির বিপরীতে এক লাখ ১২ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ২ লাখ ৮ হাজার ৪০ হেক্টর, সৈয়দপুর, ৮ হাজার ২১০ হেক্টর, ডোমার এক লাখ ৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর, ডিমলা ১৯ হাজার ৩২৫ হেক্টর, জলাঢাকায় ২৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছে কৃষকরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই তিন বছরের তুলনায় এবারে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে জেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকের ঘরে ধান তুলতে বেশ বেগ পেতে হবে।’

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে