এম ডি বাবুল, চট্রগ্রাম প্রতিনিধি: আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় র‌্যাবের নিয়মিত টহল এবং সাদা পোষাকে গোয়েন্দা নজরধারী বৃদ্ধি করা হয়েছে যাতে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে ঈদের কেনাকাটা ও বাড়িতে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়াও ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নেতাদের বাড়িতে যেতে পারে সেজন্য র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে, চট্টগ্রামের নিকট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল যে, সিএনজি ছিনতাই চক্রের কিছু সদস্য বিশেষ করে বাস ষ্ট্যান্ড, রেল ষ্টেশন এবং এয়ারপোর্টে সাধারণ মানুষ এবং প্রবাসীদের নিকট হতে সর্বস্ব লুটে নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিশেষ গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কতিপয় দুষ্কৃতিকারী একত্রিত হয়ে চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ হতে ০১টি প্রাইভেটকারযোগে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের দিকে আসছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ সন্ধ্যা হতে অদ্য ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ সকাল অব্দি র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। মোঃ ইমরান হাসান (২৭), পিতা- মৃত শফিকুল ইসলাম, ২। মোঃ রুবেল (৩১), পিতা-মেহের আলী, ৩। মোঃ শফি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান হাজারী মিজাইন্না চোরা (২৯), পিতা- মোঃ ফয়েজ মোঃ হোসেন হোসাইন্না চোরা কালা চোরা, ৪। জাহাঙ্গীর আলম সোহাগ (২৮), পিতা-ইসমত আলী, ৫। মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন (৩৪), পিতা- মোঃ আব্দুল মান্নান, ৬। ইয়াছিন আরাফাত মিনার (২৫), পিতা-দেলোয়ার হোসেন, ৭। মোঃ জমির (৪৫), পিতা-মোঃ মিন্টু, ৮। মোঃ সৈকত (২২), পিতা-মোঃ রাশেদ, ৯। হাবিবুল কিবরিয়া @ আরমান (২২), পিতা-মোঃ সিরাজ, ১০। কিল্টন দে (২৯), পিতা-বিনয় দে এবং ১১। মোঃ কায়সার হামিদ (৩৪), পিতা-মোঃ আব্দুল মোমেনদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় বর্ণিত ছিনতাই চক্রে ১০-১২ জনের একটি সদস্য থাকে। তাদের মধ্যে ৩/৪ জন বিমানবন্দরের ভিতরে অবস্থান করে এবং বাকী সদস্যরা বাইরে অপেক্ষারত থাকে। বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা সদস্যগণ বিদেশ হতে আগত নিরীহ প্রবাসীদের টার্গেট করে। উক্ত প্রবাসীরা যখন বিমানবন্দর হতে বের হয়ে গাড়িযোগে যাওয়ার জন্য রওনা দেয় তখন বিমানবন্দরের ভিতরে থাকা সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী বাইরে অপেক্ষারত ছিনতাই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা পথিমধ্যে নিরীহ প্রবাসীদের দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লাগেজ সহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এছাড়া তারা প্রবাসী ব্যক্তিদের পাসপোট ছিনিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট ফেরত দেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় তারা এ ধরনের ছিনতাই ছাড়াও চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও বাঁশখালী রুটে চলাচলকারী সিএনজি চালকদের সিএনজিসহ টার্গেট করত। তাদের এক গ্রুপ সিএনজি টার্গেট করত এবং অন্য গ্রুপ যাত্রী সেজে সেই সিএনজিতে উঠত। মাঝপথে নির্জন স্থানে তারা একত্রিত হয়ে সিএনজি ড্রাইভারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করে অনেক সময় হাত পা বেধে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে সিএনজি ছিনতাই করে চলে যেন। পরবর্তীতে উক্ত সিএনজিগুলো তাদের নির্দিষ্ট গোপন একটি স্থানে নিয়ে নাম্বার প্লেট, চেসিস নাম্বার ও সিএনজির রং পরিবর্তন করত। এরপর ২/৩টি সিএনজি একত্রিত করে কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বাহিরে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং বগুড়ায় তাদের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাচার করে দিত। এভাবে তারা চোরাইকৃত সিএনজি ক্রেতাদের চাহিদা মতো সিএনজি ছিনতাই করে স্বল্পমূলে বিক্রি করত। সিএনজির চাহিদা যখন না থাকত তখন তারা পুনরায় বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করে প্রবাসীদের লাগেজ ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত থাকত। উল্লেখ্য, উক্ত চক্রের দলনেতা হিসেবে গ্রেফতারকৃত ১ নং আসামী ইমরান কাজ করত। তার কাছে ছিনতাইকৃত সিএনজির বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়।

এছাড়া উক্ত ডাকাত দল রমজান মাস এবং ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসসমূহের সাধারণ যাত্রী এবং ড্রাইভারদেরকে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা-পয়সা ছিনতাই/ডাকাতি করে থাকে বলে নিজ মুখে স্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে গ্রেফতারকৃত ১নং আসামী মোঃ ইমরান হাসান (২৭) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদকদ্রব্য এবং ডাকাতির মোট ০৪টি মামলা; ২নং আসামী মোঃ রুবেল (৩১) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, ডাকাতি এবং মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মোট ০৪টি মামলা; ৩নং আসামী মোঃ শফি মোঃ মিজানুর রহমান মিজান হাজারী মিজাইন্না চোরা এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরী, ফেনী এবং লক্ষীপুর জেলার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি, নারী নির্যাতন ও ছিনতাইসহ মোট ০৮ টি মামলা; ৪নং আসামী জাহাঙ্গীর আলম সোহাগ (২৮) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং থানায় অস্ত্র, ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ০২টি মামলা; ৫নং আসামী মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন(৩৪) এর বিরূদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানায় ০১টি ডাকাতির মামলা; ৬নং আসামী ইয়াছিন আরাফাত মিনার (২৫) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত ০১টি মামলা; ৮নং আসামী মোঃ সৈকত (২২) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্ণফুলী থানায় ০১টি চুরির মামলা; ০৯নং আসামী হাবিবুল কিবরিয়া আরমান (২২) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এবং নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ থানায় ০২ টি চুরি ও ছিনতাই এর মামলা পাওয়া যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে