মাফি মহিউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ কাজে পাহার সমান অনিয়মে ভরা।

ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নিমার্ণ কাজে সরকারী নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করছে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ী। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী, সন্তানরা বিভিন্ন অভিযোগ করছে। তাতেও কোন ফল পাচ্ছে না তারা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ী নিমার্ণে কোন প্রকার কাজের তথ্য সংবলিত কোন সাইন বোর্ড নেই। সেখানে নেই কোন তদারকি কর্মকর্তা ঠিকাদার তার ইচ্ছে মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের কাজ করছে। যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে, তিনি নিজে কাজ না করে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৩নং নিতাই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের খোলাহাটি গ্রামের একটি ছেলে সুরুজ মিয়া নামে ছাত্রলীগ নেতা এ সব ঘরবাড়ী তৈরির কাজ করছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০টি আবাসন নিমার্ন কাজের জন্য বরাদ্ধ হয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার ১ শত ৮০ টাকা। প্রতিটি আবাসনের জন্য বরাদ্ধ হচ্ছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬ শত ১৮ টাকা করে।

কাজের দরপত্র আহবান করা হলে দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় রংপুর আলম নগরের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান শেখ কনষ্ট্রাকশন । কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিমার্ণ কাজের কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের ইট, খোয়া, ও লোকাল বালু ব্যবহার করে নিমার্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।এছাড়াও নিমার্ণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদউর্ত্তীন সিমেন্ট দিয়ে। এসব নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করলে কালিকাপুর মন্থনা গ্রামের মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা ছামছুল আলমের স্ত্রী মকছুদা বেওয়া ও তাঁর সন্তানদের সাথে ঠিকাদারের চরম বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ঠিকাদার কিছু সামগ্রী সড়িয়ে ফেলে। এরপরও কাজে তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেই চলছে।

মাগুড়া ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী হাজিরহাট বাজার সংলগ্ন মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের স্ত্রী আছিয়া বেওয়া ও তাঁর ছেলে বাবু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ি নিমার্ণ কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া,বালু ও মেয়াদ উত্তীর্ন সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে বার বার নিষেধ করা হলেও ঠিকাদার কিছুতেই কর্ণপাত করছেনা। বাবু মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে দক্ষিণ দিকের ওয়ালের একটি অংশ ধসে পড়ে। এসময় অল্পের জন্য আমার ৮/১০ বছরের শিশু সন্তান বেঁচে যায়। আছিয়া বেওয়া আরো বলেন, ভিত্তি গাঁথুনীর সময় সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন অফিসার না থাকায় ঠিকাদার দশ ইঞ্চি গাঁথুনীর কাজেও ঘাপলা দিয়েছে।

এ রকম অভিযোগ আরো বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম শাহ বারী পাইলট বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নিমার্নে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার্কে সাথে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। অভিযোগের সাথে বাস্তবতার কিছুটা মিল রয়েছে বলে তিনি বলেন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্টান শেখ কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কিশোরগঞ্জে কাজ করতে গেলে আমার কাজের সাইডে এসে সুরুজ মিয়া নামের ছেলেটি ঘোড়াঘোড়ি করত। আমি তাকে বলি তুমি কি কর সে বলে ছাত্রলীগ করি। সেই সুবাধে তার সাথে পরিচয় হয়। তাই আমার লাইসেন্স নিয়ে গিয়ে সুরুজ মিয়া টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে ঐ কাজটি সে পায়। ঠিকাদার শাহাদত হোসেন বলেন আমি এর সাথে নেই। সুরুজ নামে এক ছোট ভাই আমার লাইসেন্স দিয়ে সেখানে কাজ করছে। অনিয়মের বিষয়ে তার সাথে কথা হলে মেয়ার্দ উত্তীর্ণ সিমেন্টের কথা বললে তিনি বলেন, আমি তা সাথে সাথে পরিবর্তণ করে দিয়েছি। অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাঁরপরও বিষয়টি নিয়ে আমি তার সাথে কথা বলব। তার লাইসেন্স দিয়ে এ রকম কাজ হচ্ছে তাতে তার প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে কি না, বললে তিনি বলেন আমি আগেই সুরুজকে বলেছিলাম তুমি এসব কাজ করতে পারবা না পাড়লে কাজটি কারোকাছে বিক্রি করে দাও।

নিমার্ন কাজের স্থানীয় ঠিকাদার সুরুজ মিয়া বলেন, বাড়ি নিমার্ণ কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ বাড়ি থেকে নিম্নমানের ইট সরিয়ে নেয়ার কথা বললে সুরুজ মিয়া বলেন, ওই ইট আমি নিজেই সড়িয়ে নিয়েছি। কেন সরিয়ে নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,ইটগুলো লাল ছিল তাই সরিয়ে নিয়েছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার্ আবুল হাসনাত সরকার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নিমার্ণে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। নীতিমালা অনুযায়ী নিমার্ণ কাজ করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই। ইটের সমস্যার কথা বললে তিনি বলেন আসেন আমরা একসাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ীর কাজ দেখতে যাব। তথ্য সংবলিত সাইন বোর্ডের কথা বললে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে