gp-robi

ডেস্ক রিপোর্টঃ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক রেলওয়ের। অথচ অবৈধভাবে সেই নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। তাদের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি অনুযায়ী নিজেরা ব্যবহার করা ছাড়া এই ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কারো কাছে তারা ভাড়া দিতে পারবে না। অথচ বহু প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি ভাড়া দিচ্ছে গ্রামীণফোন। অন্যদিকে বাংলাফোন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বিটিআরসি বাতিল করেছে বছর দেড়েক আগে। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক নিয়ে চালাচ্ছে আরেক বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। বিটিআরসি বার বার চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও তারা এ বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করছে না।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, রবির বিষয়টি নিয়ে আমাদের কমিশন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। গ্রামীণফোনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

২০ বছর আগে রেলওয়ের সঙ্গে একটা চুক্তি করে গ্রামীণফোন। সেই চুক্তির আলোকে রেলওয়ের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তারা ব্যবহার করছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করছে তারা। তাদের এই চুক্তির মেয়াদ ২৬ বছর। গ্রামীণফোন যখন রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি করে তখন দেশে কোনো এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলি-কমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) লাইসেন্স ছিল না। কিছুদিন আগে সরকার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন লাইসেন্স দেয়। এগুলো হলো ফাইবার অ্যাট হোম, সামিট কমিউনিকেশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লি.) ও বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিকমিউনি-কেশন কোম্পানি লি.)।

বাংলাদেশ রেলওয়ে এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়ার পর অন্য যে কেউ তাদের কাছ থেকে সেবা নিতে পারবে। কিন্তু রেলওয়ের সঙ্গে গ্রামীণফোনের অসম চুক্তির ফলে রেলওয়ে অন্য কাউকে এই সেবা দিতে পারছে না। বিটিআরসি বলছে, রেলওয়ে যখন লাইসেন্স পেয়েছে তখন গ্রামীণফোনের সঙ্গে তাদের চুক্তি আপনাআপনি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রতি মিটার ফাইবার অপটিকের সরকার অনুমোদিত লিজ রেট যেখানে দুই টাকা, সেখানে গ্রামীণফোন রেলওয়েকে ফাইবার অপটিক লিজ বাবদ দিচ্ছে মাত্র ৬৮ পয়সা। এটাই চলছে বছরের পর বছর।

চুক্তি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো অপারেটরের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা, ভাড়া ও লিজ দেওয়া কিংবা সংস্কার করা গুরুতর অপরাধ। এই আইন লংঘন করলে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল ও ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। অথচ গ্রামীণফোন লাইসেন্স ছাড়াই বহু প্রতিষ্ঠানের কাছে এই নেটওয়ার্ক ভাড়া দিয়েছে।

একটি এনটিটিএনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, সরকার ইতিমধ্যে পাঁচটি অপারেটরকে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছে। তারা এরই মধ্যে এই খাতে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। তিন কোটি টাকা লাইসেন্স ফিসহ ১০ কোটি টাকা সরকারের ফান্ডে জমা রেখেছে। এই অবস্থায় লাইসেন্স ছাড়াই একটি কোম্পানি কীভাবে তাদের ট্রান্সমিশন অন্যের কাছে ভাড়া দিচ্ছে? এটা তো অপরাধই। বিটিআরসির এ দিকে নজর দেওয়া দরকার।

তবে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেলওয়ের সঙ্গে তাদের সব লেনদেন আইনসঙ্গতভাবেই হচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে গ্রামীণফোনকে প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। পরে এক সংশোধনীর মাধ্যমে লিজের মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়ানো হয়। লিজ চুক্তির অংশ হিসেবে গ্রামীণফোন এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার ফাইবার নতুনভাবে স্থাপন করেছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, গ্রামীণফোনের চেয়ে আরো বেশি দামে এয়ারটেলসহ বেশ কয়েকটি টেলিকম অপারেটর রেলওয়ের এ নেটওয়ার্ক ভাড়া নিতে চেয়েছিল। কিন্তু চুক্তির অজুহাতে অন্য কাউকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ফাইবার লে আউটের বিধান লংঘন করেছে গ্রামীণফোন। একই সঙ্গে অনুমতি ছাড়াই গ্রামীণফোন রেলওয়ের ছয় কোরের ফাইবার ফেলে দিয়ে ৪৮ কোরের ফাইবার লে আউট করেছে। সেখান থেকে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে ফাইবারের ক্যাপাসিটি বিক্রি করছে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও চুক্তির বরখেলাপও বটে।

অন্যদিকে লাইসেন্স বাতিল হওয়া বাংলাফোনের কাছ থেকে এনটিটিএন সার্ভিস নিচ্ছে রবি। বাংলাফোনের কাছ থেকে সার্ভিস না নিতে বিটিআরসি দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শারমিন সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাফোনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এনটিটিএন সার্ভিস না নিতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের কপি রবিকেও দেওয়া হয়েছে। অথচ এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সার্ভিস নিচ্ছে রবি। বিটিআরসির নির্দেশের প্রতি কোনো তোয়াক্কাই করছে না প্রতিষ্ঠানটি।

আই/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে