সাম্প্রতিক সংবাদ

জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প বেকার যুব সমাজের আশার আলো

ডেস্ক রিপোর্ট :  বেকার যুব সমাজের বুকে আশার আলো জ্বালিয়েছে জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প। তাদের বেকার হাতকে কর্মের হাতে পরিনত করতে বিশেষ ভূমিক পালন করে চলেছে। পরোক্ষ ভাবে সৃষ্টি হয়েছে অর্ধ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান। এই শিল্পের সফলতায় এখন প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে পোল্ট্রি খামার।

জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় আড়াই হাজার রেজিষ্টার খামার সহ জেলায় প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে বর্তমানে। ছোট বড় হিসাবে একেকটি খামারে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার পর্যন্ত মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। জেলায় বর্তমানে সোনালী জাতের মুরগি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। একটি খামারে বছরে চার ব্যাচ করে এই মুরগি পালন করা হয়। এ ছাড়াও বয়লার ৬/৭ ব্যাচ এবং হাইব্রিড লেয়ার (ডিমের জন্য) সারা বছর পালন করা হয়ে থাকে। একটি হাইব্রিড লেয়ার মুরগি বছরে ৩০০ টির বেশি ডিম দেয়। ডিম দেওয়া শেষ হলে মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয় বাজারে। জেলার প্রায় ১০ লক্ষ লোকের ৪৪ হাজার মে. টন মাংসের চাহিদার বেশির ভাগ আসে পোল্ট্রি থেকে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ গাড়ি মুরগি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, বেকার যুব সমাজের মধ্যে আশার আলো জ্বালানো এই পোল্ট্রি শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে জামালগঞ্জ সরকারি হাসঁ মুরগি খামার।স্বল্প পুঁজিতে পোল্ট্রি খামার করে লাভবান হওয়া যায় এমন বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে তৎকালীণ সহকারী পরিচালক শাহ জামাল স্থানিয় যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান সহ উদ্বুদ্ধ করা শুরু করেন। এভাবেই উত্তরাঞ্চলের ছোট জেলা জয়পুরহাট আজ পোল্ট্রি শিল্পে দেশের শীর্ষস্থান দখল করেছে। পোল্ট্রিশিল্প গড়ে ওঠার সঙ্গে বৃদ্ধি পায় বাচ্চার চাহিদা। ফলে জয়পুরহাটে বেসরকারি ভাবে স্থাপন করা হয়েছে ৩৯ টি হ্যাচারী (একদিনের বাচ্চা উৎপাদন কারখানা)। এসব হ্যাচারি থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন ৩ কোটি ২০ লাখ। মুরগির খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গড়ে উঠেছে ১১ টি ফিড মিল। প্রতি মাসে এ ফিড মিল গুলোতে উৎপাদন হয় প্রায় ১৪ হাজার মে. টন খাদ্য। যা জেলার চাহিদা শেষে পার্শবর্তী জেলা গুলোতে সরবরাহ করা হয় বলে জানালেন পল্লী ফিডের মালিক জাহাঙ্গীর হোসন।

মাংস উৎপাদনে সোনালি জাতের একদিনের বাচ্চাগুলো ৫৫ থেকে ৬০দিন বয়স পর্যন্ত খামারে লালন পালন করলে ওজন হয় সাড়ে ৬’শ থেকে সাড়ে ৭’শ গ্রাম। যা কেজির ওজনে বিক্রি করা হয়। এতে খাদ্য,ঔষুধ ও শ্রমিকসহ খামারিদের প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগির মাংস উৎপাদন খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে খামারিরা কেজির ওজনে সেই মুরগি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। শহরের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সাদা জাতের ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি মাংস উৎপাদন খরচ ১২০ থেকে ১২৫ টাকা হলেও খুচরাভাবে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে।
জেলার জামালগঞ্জ এলাকায় বেসরকারি ভাবে গড়ে তোলা শেফালী পোল্ট্রি ফার্মের মালিক সাইফুল ইসলাম আলম ৬ তলা বিশিষ্ট্য ৫টি সেড নির্মাণ করে মুরগী পালন করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান। এস এস বি পোল্ট্রি ফার্মের মালিক ইসমাইল হোসেন টুকু, পদ্মা ফিডের মালিক আনু মন্ডল পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক সফলতার কথা তুলে ধরেন। মার্কেটিং বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পোল্ট্রি খামারিরা।

জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সহ-সভাপতি ও কিষাণ পোল্ট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড প্রাঃ লিমিটেড এর মালিক জিয়াউল হক জিয়া বলেন,পোল্ট্রি শিল্পে প্রতিষ্ঠিত জয়পুরহাট জেলায় ছোট-বড় প্রায় দশ হাজার খামার, ৩৯টি হ্যাচারি শিল্প এবং ১১টি ফিড মিল (মুরগির খাদ্য তৈরির কারখানা) গড়ে ওঠেছে। পোল্ট্রি শিল্পকে ঘিরে জেলার গ্রামে-গঞ্জে গড়ে ওঠেছে খাদ্য ও ওষুধের দোকান। এতে বিনিয়োগ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের হয়েছে কর্মসংস্থান হয়েছে। সবদিক বিবেচনায় এখানে মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রোস্তম আলী বলেন, সার্বিকভাবে পরিবেশ অনুকূল থাকায় জেলায় পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে মার্কেট সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে জেলার পোল্ট্রি খামারিদের জন্য। জয়পুরহাটে মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে মুরগি বহনের সময় পরিবেশ দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে অন্যদিকে খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাবে। এতে আরো নতুন খামার গড়ে ওঠার জন্য সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডা: রুস্তম আলী।

বি/এস/এস/এন

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
shared on wplocker.com