বিডি নীয়ালা নিউজ(০৪ফেব্রুয়ারি ১৬)- মারুফ সরকার (সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি): সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে প্রতিদিন গুরুত্বসহকারে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সংবাদ প্রচারের পরেও অবৈধ বই বানিজ্য বন্ধ হয়নি। বরং আগের চেয়ে আরো প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে এসমস্ত বই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অবৈধ বই কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষকেরা। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই না কিনছে তাদেরকে স্কুলে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর অবৈধ বই সরবরাহের জন্য ধানগড়া বাজারের একটি লাইব্রেরী প্রায় অর্ধকোটি টাকার বই মজুদ করেছে এমন তথ্য অসেক আগেই ফাস হয়ে পড়েছে। এসমস্ত বই মজুদ করা হলেও জেলা শিক্ষা অফিস এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় শিক্ষার্থী অভিভাবক ও অভিজ্ঞ মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গত বছর অবৈধ বই তালিকা ভুক্ত তদন্তে প্রমানিত হলেও টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চলতি শিক্ষা বছরেও এধরনের বই তালিকা ভুক্ত করলেও জেলা শিক্ষা অফিস মুখে কুলুপ এটেছে বলে নানা মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
জানা যায়, রায়গঞ্জে সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশকের সঙ্গে ১৬লাখ টাকায় চুক্তি করে বাজারের নি¤œমানের বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ অবৈধ কাজটি উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে করছে রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকের পকেট কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোটা অংকের বাণিজ্য করে যাচ্ছেন রায়গঞ্জের শিক্ষক নেতারা।
উপজেলার এইচজিবিএল রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র জানান,প্রধান শিক্ষক নির্দেশ দেওয়ার তিনদিনের মধ্যে বই কিনতে হয়েছে। রায়গঞ্জ সদর বালিকা বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী জানান, ব্লাক বোর্ডে বই এর নাম লিখে দিয়েছিল ছারেরা। পরে ধানগড়া বাজারের একটি লাইব্রেরী থেকে বাবা কিনে এনে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যে বই স্কুলে আনা যাবেনা সেই বই কিনতে কেন শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর অনেক শিক্ষকরাই জানেননা। তবে তিনি এটাও বলেন যে বই স্কুলে নিষিদ্ধ সেই বই আসলেও অবৈধ। একজন প্রবীন শিক্ষক বলেন,কিছু শিক্ষক নেতা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে জোর পায়তারা শুরু করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতেও এধরনের অপকর্ম করতে পিছপা হবেনা।
সরকার কর্তৃক বই সরবরাহ করার পরেও রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এই চারটি শ্রেণীর জন্য ঢাকার বাংলাবাজারের একমিও এ্যাডভান্স প্রকাশনির সঙ্গে চুক্তি করে বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ বই পৌঁছে দিচ্ছে রায়গঞ্জে বিভিন্ন পুস্তক বিক্রেতার দোকানে। স্কুলে স্কুলে নি¤œমানের দামী ঐ বইগুলো শিক্ষার্থীদের ক্রয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে । শিক্ষক সমিতি অসৎ উপায়ে আদায় করে নিয়েছে কমপক্ষে ১৬ লাখ টাকা। ধানঘড়া বাজারের একটি লাইব্রেরির মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন করা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক একাধীক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার পরেও থেমে নেই এই বই বানিজ্য। আর ঐ লাইব্রেরীর মালিক নিজেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি স্বরুপে প্রকাশের জন্য জেলার উর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে এসমস্ত বই। অনেকে ভাবছেন তার কাছে আইনের কোন মুল্য নেই। টাকার জোরেই এসমস্ত করতে সাংবাদিকদেরকেও নানা ভাবে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
ঐ লাইব্রেরীর স্বত্বাধীকারী জানান, কোন বই অবৈধ নয়। ছাত্ররা বই কিনতে চাইলে সেই বই অবশ্যই বিক্রি করব। এখানে প্রশাসনের দেখার কিছু নেই। কয়েকজন সাংবাদিক নিজেদের স্বার্থ লোটার জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এতে তার কিছুই যায় আসেনা।
গত এক বছর পুর্বে এসংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত বছর এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করায় এবারো সেই বিতর্কিত শিক্ষক নেতারা ১৬লাখ টাকার বিনিময়ে আবারো সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত বই কিনতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীদের বাধ্য করার অপচেষ্টা শুরু করেছেন। বারবার অভিযোগ প্রমানিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি রায়গঞ্জের শিক্ষক নেতারা কি আইনের উর্দ্ধে।
এব্যপারে রায়গঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাকমান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বিষয়টি খোজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা হচ্ছে। যদি কোন বাধ্যতামুলক প্রমানাদি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই বিধিমোতাকেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।