আতিকুর রহমান, লালপুরে (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলটি একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভারি শিল্প কারখানা। স্বাধীনতার পর থেকে মিলটি লাভের চাইতে লোকসানের বোঝায় বেশি। আগামী শুক্রবার ১০ নভেম্বর ৯৩ তম (২০২৩-২৪) আখ মাড়াই মৌসুমে ৯শত কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল। অন্যদিকে মিলের বিরুদ্ধে একাধিক কৃষকের অভিযোগের অন্ত নেই। কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের নিজস্ব জমিতে মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষ না করে ওই জমি জনসাধারণকে লিজ দিয়ে আসছে। লিজ নিয়ে অন্য আবাদ করা হচ্ছে। যার কারণে তাদের আখ সরবরাহ সংকটে পড়ে। মিলে আখ সরবরাহ করে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আখের মূল্য পেতে অনেক ঘুরতে হয়।

অপর দিকে গুড় উৎপাদনকারীরা (ক্রাশার মাড়াইকলে) জমি থেকে আখের মূল্য বেশি দরে ও দ্রুত পরিশোধ করে। তাছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ এক মাস দেরিতে মাড়াই শুরু করায় আখ কেটে রবি শস্য করা সম্ভব হয় না। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবিষয়ে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা জানান, ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে ১০৩ কার্যদিবসে ১ লাখ ৭০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১১ হাজার ৭৩০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে শতকরা ৬.৯০ ভাগ। উৎপাদিত চিনির মূল্য ধরা হয়েছে একশত পঞ্চাশ কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সুগারমিল এলাকায় মিল চলাকালীন সময়ে পাওয়ার ক্রাশার দিয়ে আখ মাড়াই নিষিদ্ধ আছে। মিলটি রক্ষার্থে মিল এলাকার আখচাষিরা মিলে আখ সরবরাহ করবেন। এটি অঞ্চলের একমাত্র ভারী রাষ্টীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। মিল না থাকলে চাষিরা আখের ন্যায্যমূল্য পাবেন না। তাই শিল্পটিকে বাঁচাতে অভিযান চালু থাকবে।

সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৩৫৯ জন পাওয়ার ক্রাশার মালিককে ক্রাশার বন্ধ রাখার জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও আখের মূল্য ২২০ টাকা মণ নির্ধারণ করা হয়েছে। কাংখিত আখ পেলে মিলটির লাভের মুখ দেখার আশা রয়েছে।

এদিকে গোপালপুর গুড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক জানান,সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স যুক্ত করার পরও মিল কর্তৃপক্ষ গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে মাড়াই কল-যন্ত্রাংশ জব্দ করছে। এতে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম বলেন, মিলটি লাভবান করতে সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থাপন করা জরুরি। মিলটি শুরু থেকে স্বাধীনতার পর আশির দশক পর্যন্ত এখানে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল যেমন কড়াই ফ্যাক্টরি, রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, লজেন্স কারখানা, তেলের ঘানি, পিতল ঢালাই কারখানা, ডেইরি খামার ছিল। এখানে উৎপাদন ও বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লাভ করত, যা বর্তমানে কিছুই নেই। এছাড়া উন্নত ও টেকশই বীজ সরবরাহ না করা, আখ মাড়াইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি না পাওয়ায় মিলটির লোকশানের কারণ।

আখচাষী নেতা আনছার আলী দুলাল বলেন, নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি, ডিস্টিলারি স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সারা বছর উৎপাদন কার্যক্রম চালু থাকবে। দেশে চিনির চাহিদা পূরণ করবে। এতে মিলের লোকসান থাকবে না। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে