ডেস্ক রিপোর্টঃ দেশের বয়স্ক পিএসসি পরীক্ষার্থী বাছিরন নেছা (৬৪) পাস করেছেন । বাছিরন ৩.০০ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছেন কৃতিত্বের সাথে। বৃহস্পতিবার মহিলা এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাছিরনের স্কুল ও বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি খাইয়ে এসেছে। মহিলা এমপি বাছিরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পাকাকরণ এবং তার লেখাপড়ার ভারও নিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ায় বাছিরনের বাড়ি। বাছিরন গ্রামের রহিল উদ্দিনের (মৃত) স্ত্রী। ৩৫ বছর আগে স্বামী মারা যায়। বাছিরনের রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে মহির উদ্দিনের সাথে থাকেন তিনি। বাছিরনের নাতি-নাতনীরা কলেজে ও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকে বাছিরন ২০১১ সালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ২০১৬ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন।
বাছিরন জানান, সে সময় অর্থসংকটে তার পড়াশোনা হয়নি। চেষ্টা করেছিলেন ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। এর মধ্যেই মারা যায় তার স্বামী। ফলে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। পরে যখন নাতি-নাতনীরা লেখাপড়া শুরু করলো তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজে লেখা পড়া করার।
আজ বৃহস্পতিবার বাছিরন তার বয়োবৃদ্ধ ভাই আকবর আলী ও ছেলে মহির উদ্দিনকে সাথে করে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন পরীক্ষার ফলাফল জানতে। সেখানে বাছিরন জানান, খুব ভয়ে ছিলাম ফলাফল কী জানি কী হয় ।
বাছিরন জানান,এবার তিনি গ্রামের এমএইচএ মহাম্মদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়-এ ভর্তি হবেন।
দুপুর দুইটার দিকে মেহেরপুরের সংরক্ষিত মহিলা এমপি সেলিনা আখতার বানু ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ে। এ সময় তিনি বাছিরনের কারণে বিদ্যালয়টি পাকাকরণের ঘোষণা দেন এবং বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন বলেও জানান। তিনি আশা করছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিদ্যালয় পাকাকরণের কাজ শুরু হবে। পরে তিনি বাছিরনের বাড়িতেও যান।
প্রধান শিক্ষক হেলালউদ্দিন বলেন, বাছিরন নেছা ২০১০ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কয়েকবার এসেছিলেন। বয়স্ক মানুষ ভেবে সে বছর তাকে ভর্তি করানো হয়নি। পরবর্তীতে যখন সে আবার আসে ২০১১ সালে তাকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর থেকে তার আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছি। প্রতিদিন সে ক্লাস করেছে। ক্লাসের সহপাঠীদের সাথে তার শিশুদের মতোই আচরণ শিক্ষকদের মুগ্ধ করতো।
দাদীর বয়েসী বাছিরনের নিয়মিত স্কুলে আসা দেখে তার সহপাঠীরাও অনুপ্রাণিত হয়।
সহপাঠী মৌ জানায়, বাছিরন তার দাদীর বয়েসী হলেও তাকে বান্ধবীর মতো করে দেখতে হয়। লেখাপড়া নিয়ে কোনো সমস্যা মনে হলে একে-অপরকে সহযোগিতা করেন। সে আরো জানায়, বাছিরনকে স্যাররা পড়া ধরতে দেরি করলে মন খারাপ করে বলতেন আমার পড়া ধরেন।
ছেলের বউ জাহানারা বেগম বলেন, আমার আর দুটি সন্তানের সাথে শাশুড়ীও লেখাপড়া করে। লেখাপড়ার সাথে সাংসারিক কাজেও সহযোগিতা করেন। বৌমাকে নিয়েও খুশি বাছিরন। বাছিরন ছেলে বউকে দেখিয়ে বলেন, আমার দুটি পরের বাড়িতে গেছে। পরের মেয়ে আমার বাড়িতে এসেছে। তাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমারই।
বাছিরনের মেয়ের ছেলে (নাতী) জসিমউদ্দিন বলেন, নানীর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আমাদের অণুপ্রাণিত করছে।
মটমুড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, আমার ইউনিয়ন এলাকায় এ ধরনের বয়সের কেউ লেখাপড়া করতে চাইলে তাকে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর আলী জানান, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। এ বয়সের একজন পিএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেÑ যা নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়তে সকলেই অনুপ্রাণিত হবে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে