জি, এম স্বপ্না, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ইউপি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চেয়ারম্যান-মেম্বর প্রার্থী ও কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী এলাকা। প্রার্থীদের মধ্যে এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে,যে কোন মুল্যে তাদের চেয়ারম্যান-মেম্বর হতেই হবে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই চলছে পোস্টার ছেড়া,প্রতিপক্ষকে প্রচারে বাধা,হুমকী,অগ্নি সংযোগ, মামলা,হামলা আর সংঘর্ষ। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা আর আনাগোনায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জে ১৭ টি ইউনিয়নেও চলছে । ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া,ধামাইনগর ও ব্রক্ষগাছা ইউনিয়ন ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ, ছোনগাছা ও রতনকান্দি সহ মোট ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার খরবও জানা গেছে।

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে উপজেলার ধুবিল ইউনিয়নে ৩০ অক্টোবর স্বতন্ত্র প্রার্থী আ: করিম রেজা চশমা মার্কার প্রচারে বাধা,মারপিট করায় রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ, ৩ নভেম্বর দুপুরে চুনিয়াখাড়া বাজারে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী করিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন আহত এবং সন্ধ্যায় নৌকার প্রার্থী রাসেলের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণে মামলা,পাঙ্গাসী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি,সম্পাদক সহ ৮ জন বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় উত্তেজনা,২ নভেম্বর চান্দাইকোনা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বরপ্রার্থী শরিফের কর্মীকে অন্য প্রার্থী আলিমের সমর্থকদের হামলার প্রতিবাদে হঠাৎ বাজারে মানববন্ধন, ৩১ অক্টোবর সোনাখাড়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ছানা ও নৌকার প্রার্থী আবু হেনার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন আহত হওয়ায় মামলা,নলকা ইউনিয়নে ৩১ অক্টোবর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেনের (ঘোড়া মার্কা) বকুলতলা অফিসে অগ্নি সংযোগ,ভাংচুর,সাহেবগঞ্জ বাজারে আবু বকর সিদ্দিক (নৌকা মার্কা) অফিস ভাংচুরে মামলা, ৩ নভেম্বর সদর উপজেলার কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকার অফিসে আগুন, ৪ নভেম্বর রাতে বহুলী ইউনিয়নের সতন্ত্র প্রার্থী ফরহাদ হোসেনের আনারস প্রতিকের পোষ্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ, ৩০ অক্টবর সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নে সতন্ত্র প্রার্থী কর্তৃক নৌকার পোষ্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ, শিয়ালকোল ইউনিয়নে প্রকাশ্যে নৌকার ভোট কেটে নেয়ার হুমকীসহ সতন্ত্র প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম কর্তৃক সাংবাদিকদের অবগত করন। ৭ নভেম্বর শিয়ালকোল ইউনিয়নে ৪ সতন্ত্র প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের যেতে বাধা, হামলা, অস্ত্র প্রদর্শন করায় সাংবাদিকদের সড়ক অবরোধ। ৭ নভেম্বর রাতে কালিয়াহরিপুর ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের কর্মীর সিএনজিতে অগ্নি সংযোগ সহ নির্বাচনী এলাকায় ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

সরেজমিনে নির্বাচনী এলাকায় গেলে সাধারন ভোটাররা বলেন,নির্বাচনের আগেই যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, জানিনা ভোটের দিন কি হবে? বয়স্ক কয়েকজন ভোটার বলেন, আমরা ইতিপুর্বে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভাংচুর,মারামারি,অগ্নি সংযোগ,বোমা হামলা বা এমন সংঘাতের ঘটনা দেখিনি। তবে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন বলছে, নির্বাচনের আগে হামলা,মামলা,ভাংচুর,অগ্নি সংযোগ যাই করুক না কেন, আগামী ১১ নভেম্বরে রায়গঞ্জে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবেন তারা। নির্বাচনে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সজাগ থাকবেন।

এসব ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম বলেন, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন মানুষকে উপহার দিবো।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আমরা সিরাজগঞ্জে সর্বোচ্চ শক্তির প্রয়োগ শুরু করেছি। আশা করছি শান্তিপুর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে