আন্তর্জাতিক রিপোর্ট : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অভিযোগ করেছেন, ১৫ আগস্ট সে দেশের স্বাধীনতা দিবসে রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারের জন্য তিনি যে ভাষণ রেকর্ড করেছিলেন – কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রসার ভারতী বোর্ড তা অবিকৃতভাবে প্রচার করতে রাজি হয়নি।মি সরকার বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাকে স্বাধীনতা দিবসের ‘গাম্ভীর্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে’ ভাষণটি প্রায় পুরোটাই পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল, যাতে তিনি রাজি হননি।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভাষণে কী এমন ছিল যেটাকে কেন্দ্র সম্প্রচার করার অযোগ্য মনে করেছে? প্রসার ভারতী বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকেই বা তিনি কীভাবে দেখছেন?

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, “স্বাধীনতা দিবস মানে যে শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা যে জাতীয় আত্মসমীক্ষারও দিন, সেটাই আমি ভাষণে বলতে চেয়েছিলাম।”

“আমি বলেছিলাম, ভারতের জাতীয় ঐক্য, সংহতি আর ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা আজ বিপন্ন। একদল লোক ভারতকে আজ ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। গোরক্ষার নামে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছেন দলিত বা মুসলিমরা”, বিবিসিকে জানান মি সরকার।ভারতের স্বাধীনতা দিবসের তিন দিন আগে, ১২ আগস্ট সন্ধ্যাবেলা মানিক সরকারের এই ভাষণ রেকর্ড করা হয় ১৫ তারিখে রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচারের জন্য।

কিন্তু ভারতে সরকারি রেডিও ও টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রসার ভারতী ওই বক্তৃতা রেকর্ড করার ঠিক দুদিন বাদে ত্রিপুরা সরকারকে জানায়, মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণ না-বদনালে এটা প্রচার করা সম্ভব হবে না।

ভারতে দলিত ও মুসলিমদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমেই তীব্র হচ্ছেছবির কপিরাইটSAJJAD HUSSAIN
Image captionভারতে দলিত ও মুসলিমদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে

স্বাধীনতা দিবসের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাকে সেই ভাষণ পুরোটা আবার নতুন করে লিখে রেকর্ড করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।

“আমার অফিসাররা যখন এ কথা আমায় বললেন, আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিই ভাষণ বদলানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমি ভাষণে যা বলেছি সবই সত্যি কথা, আমি তো কোনও মনগড়া অভিযোগ করিনি”, বিবিসিকে বলেন মানিক সরকার।তিনি প্রসার ভারতীর এই হস্তক্ষেপকে ভারতের একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছেন।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চল্লিশ বছর আগে জরুরি অবস্থার সময় এ জিনিস হয়েছিল। মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলারও অধিকার ছিল না। আজ দেশে কাগজে-কলমে জরুরি অবস্থা নেই ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক একই রকম পর্যায়ে গেছে।”

“গণতন্ত্রের মূল কথাটাই হল রাম আর শ্যাম সেখানে তাদের ইচ্ছেমতো মন খুলে কথা বলতে পারবে। কিন্তু আজকের ভারতে রামের পছন্দ না-হলেই শ্যামের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে – এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে”, তীব্র সমালোচনার সুরে বলছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।

বি/বি/সি/এন


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে