islam
বিডি নীয়ালা নিউজ(৯ই মে১৬)-ইসলামিক প্রতিবেদনঃ  যারা আল্লাহ তাআলাকে অবিশ্বাস করে তার অলীক সৌভাগ্যের কল্পনার পেছনে ছোটে। যারা ঈমানের পথ এড়িয়ে চলে তারা বিভ্রান্তিকর মরীচিকা ছাড়া আর কোথাও পৌঁছতে পারে না। কারণ, তারা মানুষের গভীরতায় প্রোথিত স্বভাবের বৈশিষ্ট্যাবলিকে অস্বীকার করে। মানুষ এমন এক সৃষ্টি যার শারীরিক চাহিদাগুলো আত্মিক চাহিদাগুলো থেকে ভিন্ন নয়। আর আত্মাই মনুষ্যজীবনের ভিত্তি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য সৌভাগ্যের পথ নির্দেশ করেছেন এবং দুভাগ্য-দুর্দশার পথের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলাই মহান স্রষ্টা, প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞানী—“যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।” [সুরা মুল্ক : আয়াত ১৪]
আপনার প্রতিপালকই সবচেয়ে ভালো জানেন কোন্ জিনিস আপনার জীবনের জন্য যথার্থ ও কল্যাণকর এবং কোন্ জিনিস আপনার আত্মায় স্বস্তি ও প্রশান্তি জোগাবে—“তিনি (মুসা) বললেন, ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, তারপর (জীবন ও কর্মের) পথনির্দেশ করেছেন।’” [সুরা তোয়া-হা : আয়াত ৫০]
কোনো যন্ত্রের আবিষ্কারক ওই যন্ত্রের জন্য কী কী জিনিস উপযোগী এবং যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করবে তার সঠিক পন্থা নির্দেশ করে দেন। এটি একটি জড়-প্রাণহীন যন্ত্রমাত্র। তা হলে কীভাবে পথভ্রষ্টকারীরা মনুষ্যসৃষ্টিকে আল্লার তাআলার নির্দেশনা ও হেদায়েত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে পরিচালিত করতে চায়? এবং তারপর ধারণা করে বসে যে, কোনোরকম বিচ্যুতি ও ভ্রান্তি ছাড়াই মানুষ তার সরল ও সঠিক পথেই অটল থাকবে?
মানুষ যখন তাওহিদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়, বিভিন্ন ধরনের পথ খুঁজতে শুরু করে। সে ভাবে, আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে তার আত্মার যে-সকল চাহিদা পূর্ণ হতো ওইসব পথে সেসব চাহিদা পূর্ণ হবে। ফলে সে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়। সূর্যের রশ্মিকে বা চাঁদের আলোকে বা আগুনের লকলকে জিভকে উপাস্য বানায়, অথবা প্রতিমা ও বৃক্ষকে দেবতা বানায়; এসব বাতিল উপাস্য ও দেবতা মানুষের সঙ্গে চরম প্রতারণা করে। অথচ মানুষ ভাবে, এভাবেই সে স্বভাবের ডাকে সাড়া দেবে এবং তার আত্মার সৌভাগ্য নিশ্চিত করবে!
বস্তুবাদী জ্ঞানের বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে বটে; কিন্তু ব্যক্তিক ও সামগ্রিকভাবে মানুষের আত্মিক জটিলতা ও সামাজিক সঙ্কট দিন দিন চরম হয়ে উঠেছে। বরং এই বস্তুবাদী জ্ঞানরাশিকে—অনিবার্যভাবে যাকে মানুষের বিলাসসামগ্রীকে সহজলভ্য করে তুলতে ও তাদের পরিশ্রমকে হ্রাস করতে কাজে লাগানো হয়েছে—মানুষের ঘাড়ের ওপর খোলা তরবারিরূপে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি এমন পাপবিদ্ধ তরবারি যার দ্বারা শক্তিমানেরা শক্তিহীনদের ধ্বংস করছে এবং তাদেরকে নিজেদের খামখেয়ালিপনা ও লোভ-লালসা মেটানোর জন্য বাধ্য করছে। এমনকি তারা দুর্বলদের সম্মান লুণ্ঠন করছে, তাদের মনুষ্যত্বকে ভূলুণ্ঠিত করছে, তাদের আত্মার বিলুপ্তি ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন বিধ্বংসী অস্ত্রের সাহায্যে তারা কয়েক সেকেন্ডে শত শত প্রাণ হরণ করছে।
হায়! আফসোস এই অলীক অগ্রগতির জন্য, আফসোস এই অশুভ সভ্যতার জন্য।
জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মনুষ্যজাতি অনেক জয়ের মুখ দেখেছে। কিন্তু তার সবকটিই কি তার জীবনে কাজে লেগেছে? মানুষ কি সুখ-সৌভাগ্যের সন্ধান পেয়েছে? স্বস্তি লাভ করেছে? শান্তি ও প্রশান্তি অর্জন করেছে?
না, কিছুতেই নয়। মানুষ আয় করেছে কেবল দুর্ভোগ ও উদ্বেগ ও ভীতি; আয় করেছে স্নায়ুবিক ও আত্মিক ব্যাধি; সংঘটিত করেছে বিপুল বিপুল অপরাধ।
যে-জ্ঞানের দায়িত্ব ছিলো মানবসভ্যতার প্রতিটি জয়কে মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের এক-একটি উপায় বানানো, স্বয়ং সেই জ্ঞানের দ্বারাই মানবতা তার আত্মার নির্বাপন ও অধঃপতনের কারণে তার সৌভাগ্যের পথ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছে।
আমরা মানবতার কঠিন বাস্তবচিত্র দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা দূরদিগন্তে মুক্তির নিশানও দেখতে পাচ্ছি, মরুভূমির রৌদ্রতাপে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। যারা পঙ্কিল জলাশয়ে নিমজ্জিত তাদের আলোকিত আশ্রয়স্থল স্পষ্ট হয়ে উঠছে। [দেখুন : তাফসির ফি যিলালিল কুরআন, সাইয়িদ কুতুব, প্রথম খ-, পৃষ্ঠা ৪৪০।]
হ্যাঁ, অবশ্যই তা হলো এই দীন; স্বভাবধর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই দীন, যা মানুষকে তার প্রকৃত সৌভাগ্যে ভূষিত করতে পারে, তার জন্য স্বস্তি ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে। এই দীনই মনের প্রহরা ও আত্মিক সংযমকে সুদৃঢ় করে, যা মানুষকে মানুষের প্রতি জুলুম ও অবিচার করা থেকে বিরত রাখে। এই দীন প্রত্যেক মানুষকে তার ভাইয়ের অধিকার ও প্রাপ্য সম্পর্কে শিা দান করে। যেসব কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় সেসব কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এই দীনই চিরত্র ও শিষ্টাচার শেখায় এবং আত্মাকে পবিত্র রাখে।

লেখকঃ মুহম্মদ আলতাফ হোসেন

          সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে