জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১ শত ইটের বিপরীতে শ্রম হিসেবে শিশু শ্রমিকের মিলে মাত্র ৫ টাকা।

এমনি দৃশ্য চোখে পড়েছে আজ শনিবার সৈয়দপুরের একটি ইট ভাটায়। সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে একটি ইটভাটায় শিশু শ্রমিকরা কাজ করছে।

তাদের সকলের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। সবচেয়ে বড় যে, তার বয়স হবে ১১ অন্য দুজনের আট থেকে দশ বছর। কিন্তু তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
তাঁরা সবাই লেখাপড়া করে। তাদের কাজ হচ্ছে, ইট তৈরী, রোদে শুকানোর জন্য ইট উল্টানো, ট্রলিতে করে শুকনো ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, কাঁদামাটি বহন করাসহ সব কাজেই করছে এসব শিশু।

তারা জানান, রোদে ইট শুকানোর জন্য ইটের দুই পাশ ঘুড়িয়ে দিতে হয়। এত ১০০টি ইট ঘুড়িয়ে দিলে পাঁচ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে মিলে। আর কাঁচা ইট তৈরীতে মিলে হাজার প্রতি ৫৮০ টাকা। এতে প্রতিদিন একজন শিশু এক হাজার থেকে ডের হাজার ইট তৈরী করতে পারে।

এর মধ্যে কাঁদা প্রস্তত করে ইট তৈরী ও ইট শুকিয়ে খামাল (গোছানো) তৈরী করে দিতে হয়। একই চিত্র দেখা যায় গোটা উপজেলায়। এ উপজেলায় ২৭ টি ইটভাটা রয়েছে।

এসব ইটভাটায় সাধারণ শ্রমিকের মত এই শিশুরাও সমতালে কাজ করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ইট ভাটার কর্মরত শিশুরা অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। আবার অনেকেই বিদ্যালয়ে যায় না। কারন হিসেবে বলে আমরা গরীব মানুষ, বাবা একাই সংসার চালায় তাই বাবাকে সাহায্য করার জন্য কাজ
করছি।

অপরজন বলে, করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় আর স্কুলে যাইনা, কাজ করে সংসারে সাহায্য করি। কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল এলাকার পিতাপূত্র একই সাথে কাজ করছেন। আবার কেউ মায়ের সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। তারা দুজনেই কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ট্রলিতে
করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো এসব কাজ করে। এতে প্রতিদিনে কাজ হয় ৪ থেকে ৫ শত টাকা।

এ বিষয়ে কথা হয় সিনিয়র চিকিৎসক ডা. শেখ নজরুল ইসলামের সাথে, তিনি বলেন, ইটভাটায় কর্মরত শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভাটায় দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, এজমা, হাঁপানি, ব্রনকাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ভাটার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি ও করোনার জন্য বহুদিন থেকে ভাটা বন্ধ ছিল। শুরু করেছি সবেমাত্র। শিশুদের আমরা কাজে নিতে চাইনা, কিন্তু তারা নিজের ইচ্ছায় কাজ করে। অনেকেই আছেন, তাঁদের সন্তানদের
নিয়েই তাঁরা কাজ করছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হুসাইন বলেন, যে সব ইটভাটায় শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে