জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ শতবছরের ঐতিহ্যবাহী সাংষ্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্র নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে মূর্তজা ইন্সটিটিউট এখন কাপড় ব্যবসায়ীর গুদাম ঘর। নিয়ম বহির্ভূতভাবে অত্যন্ত গোপনে এই মিলনায়তনটি ভাড়া দিয়েছেন পরিচালনা কমিটি। বিনিময়ে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা ভাড়া পকেটস্থ করছেন তারা। 

অথচ অবৈধ এই বিষয়টি নিয়ে কেউই অবগত নন বলে দায়িত্ব এড়িয়ে একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের এহেন অবিবেচক কর্মকান্ডে সৈয়দপুরের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মাঝেও তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সোমবার (৭মার্চ) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ইন্সটিটিউটের মূল হলরুম ছাড়া পাশের ক্লাবরুম, গেস্টরুম, রিহার্সাল রুম, কস্টিউম রুম থান কাপড়ের বেইলে ঠাসা। প্রতিটি রুমে লাখ লাখ টাকার মাল। 

এসময় উপস্থিত মিলনায়তনের কেয়ার টেকার আখতার জানান, কমিটি ভাড়া দিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমার দায়িত্ব দেখাশোনা করা, তাই করছি। তিনি বলেন, গত তিন মাস হলো স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী নাদিম আকতার এখানে কাপড় রাখতেছে।

কাপড় ব্যবসায়ী নাদিম আকতার বলেন, ভাড়া নিয়ে কাপড় রাখছি। তাতে কার কি? প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি। এমন নয়তো যে, অবৈধভাবে দখল করে গুদাম বানিয়েছি। কিছু জানার থাকলে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।কিভাবে ভাড়া দিয়েছেন তারাই ভালো জানেন।

এলাকাবাসীরা জানান, কাপড় ব্যবসায়ী নাদিমের সাথে সৈয়দপুর রেলওয়ে সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) তৌহিদুল ইসলামের বেশ সখ্যতা। একারনে নাদিম মূর্তজা ইন্সটিটিউটের পাশেই গার্ডপাড়া এলাকায় একটি রেলওয়ে কোয়াটার অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছে। 

এছাড়াও রেলওয়ের আরও কয়েটি স্থাপনা ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে দীর্ঘ দিন থেকে। একইভাবে মূর্তজা ইন্সটিটিউটও ভাড়া নিয়েছে। এক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার রেলওয়ে কারখানার হিসাব রক্ষক রেজা হাসান ও কেয়ার টেকার আখতারের যোগসাজশ আছে। 

কোষাধ্যক্ষ রেজা হাসান জানান, সভাপতি সেক্রেটারীর অনুমতিক্রমে কমিটির তহবিল উন্নয়নের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে নিয়মিত ভাড়া আদায়ও করছি। এতে তো আয় বেড়েছে। যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহসহ উন্নয়ন করা হবে। 

সাধারণ সম্পাদক ও রেলওয়ে পিডাব্লিউ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী তৌহীদুল ইসলামকে মোবাইল করা হলে তিনি বলেন, টাকার প্রয়োজনে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তাতে কি সমস্যা? 

তিনি বলেন, হলরুম তো খালিই আছে। সেখানে সভা সমাবেশ বা অনুষ্ঠান অনায়াসেই করা যায়। অন্যরুমগুলো কোন কাজে লাগেনা তাই ভাড়া দিয়েছি। এখানে নিয়ম অনিয়মের কি আছে? বিষয়টি কমিটির সবাই জানে। 

সৈয়দপুর রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএন) ও কমিটির সভাপতি আহসান উদ্দীন মোবাইলে বলেন, ভাড়া দেয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কোনভাবেই এটি স্থায়ী ভাড়া দেয়ার সুযোগও নেই। শুধু সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বিনোদনমূলক  অনুষ্ঠান করতে নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য ভাড়া দেয়া যাবে। 

তিনি আরও বলেন, সভাপতি হলেও আমি নিয়মিত যাইনা বা কোন বিষয়েই ওতপ্রোতভাবে খোঁজখবর রাখা হয়না। সব সাধারণ সম্পাদকই তদারকি করেন। তিনিই বলতে পারবেন কিভাবে সেখানে কাপড় রাখা হচ্ছে। 

এব্যাপার সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক (ডাব্লুএম) শেখ হাসানুজ্জামানকে জানালে তিনি ভাড়া দেয়ার বিষয়ে জানেন না বলে এনিয়ে ডিএস’র সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের প্রধান রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমানকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। এগুলোর বিষয়ে এখনও ভালোভাবে জানা হয়নি। জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

উল্লেখ্য, মূর্তজা ইন্সটিটিউট সৈয়দপুর শহরের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম কেন্দ্র। বিশেষ করে রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিনোদনের প্রধান চত্বর। একসময় এই প্রতিষ্ঠানটিই ছিল তাদের মিলনমেলা। এখনও বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে এখানেই আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান। সমাবেশ ঘটে সংস্কৃতিপ্রেমীসহ সর্বস্তরের মানুষের। 

সেই প্রিয় অঙ্গনটিকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে যথেচ্ছ ব্যবহার করায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সাংষ্কৃতিককর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এর ঐতিহ্য রক্ষার জন্য অবৈধভাবে ভাড়া দেয়ার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার দাবী জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে