জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে অনলাইনভিত্তিক থাই ও ক্যাসিনো জুয়ায় আসক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে প্রবাসী বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হুমায়ুন কবির ওরফে বাবু (২২) নামে বখে যাওয়া পুত্র। সে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ায়।

এদিকে, সাজানো অপহরণ ঘটনার আট দিন পর গত ৩০ জানুয়ারি গভীর রাতে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনার মূল হোতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বাবুকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে। ওই শিক্ষার্থীর সাজানো অপহরণের ঘটনার বিষয় জানাতে সৈয়দপুর থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। এতে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্ত সাজানো অপহরণ ঘটনা ও উদ্ধার সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

এ সময় থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহা আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম রাসেল পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। প্রেস বিফ্রিংয়ে জানানো হয়, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হুগলীপাড়ার তহিদুল ইসলাম ও হামিদা বেগম দম্পতির দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তানের মধ্যে হুমায়ুর কবির বাবু সকলের ছোট।

প্রায় চার বছর আগে বাবু’র বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তার মা হামিদা বেগম প্রায় দুই বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া বসবাস করেন। বাবু’র বাবা প্রবাসী তহিদুল ইসলাম প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবৎ কাতারে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাবু সৎ মায়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে থাকেন। শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবু লেখাপড়ার পাশাপাশি অনলাইন জুয়ায় ( থাই ও ক্যাসিনো) আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। ফলে ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে সে নিজেকে নিয়ে একটি অপহরণ নাটকের ফন্দি আটে।

ঘটনার দিন গত ২৩ জানুয়ারি সে তার সৎ মা স্বপ্না বেগম এবং চাচী মালেকা বেগমকে নিয়ে কেনাকাটা করতে সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটে আসে। এরপর সে সেখানে তাদের বসিয়ে রেখে গা ঢাকা দেয়। সাজানো ঘটনার নায়ক শিক্ষার্থী বাবু’র স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, সে তার সৎ মা ও চাচীকে সৈয়দপুর প্লাজায় রেখে একটি অটোরিকশায় নীলফামারীতে যায়। সেখানে রেলওয়ে স্টেশনে হাবিুবর রহমান (৩০) নামের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাকে সে তার অপহরণ পরিকল্পনার কথা বলে। সেখানে তারা অপহরণ নাটক সাজিয়ে যে টাকা আসবে তারা দু’জনে ভাগ করে নেবে। পরে হাবিবুর শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বাবুকে তার নীলফামারী সদরের চাঁদের হাট এলাকার বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে তাকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীতে হুমায়ুন কবির বাবু তার কাতার প্রবাসী বাবাকে ইমুতে কল করে জানায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে। দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেবে অপহরণকারীরা। এতে বাবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে জন্য স্থানীয় একটি স্কুল ঘরের মধ্যে সে নিজের হাত পা বেঁধে বাবার কাছে ইমুতে দেখান। এতে বাবুর বাবা ঘটনার বিশ্বাস করেন এদিকে বাবুর মা হামিদা বেগম প্রথমে ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে বাবু বাবার কাছ থেকে তাকে অপহরণের বিষয়ে জানতে পেরে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীর বাবু’র বাবা ছেলেকে ফিরে পেতে অপহরণকারীদের চাহিদা মধ্যে ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে থানায় মামলা দায়ের পর থেকে সৈয়দপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম রাসেল পারভেজ সঙ্গীয় অফিসারদের নিয়ে ঘটনাটি তদন্তে নামেন। পরবর্তীতে পুলিশী তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে,বাবু বাবার পাঠানো টাকা নীলফামারীতে ক্যাশআউট করা হয়েছে।

এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করেন। এনিয়ে পুলিশী তৎপরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অপহরণ নাটকের মুল হোতা হুমায়ুন কবির বাবু গত ৩০ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে পৌঁছেন। পরে সোর্সের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ওইরাতে হুমায়ুর কবির বাবুকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের সে নিজে নিজে অপহরণ নাটক সাজানোর ঘটনাটি স্বীকার করেন।

সৈয়দপুর থানা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম জানান, বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘটনার বিষয়ে হুমায়ুন কবির বাবু’র ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দীর জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে