জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ গবাদী পশু গরু ও মহিষের গোবর দিয়ে তৈরি করা ঘুটে ও শলাকা জ্বালানী হিসেবে সৈয়দপুরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনই শুধু রান্নার কাজে ঘুটে বা শলাকা ব্যবহার করতো।

কিন্তু বর্তমানে শহরসহ উপজেলার প্রায় সকলেই গহস্থালি কাজে ঘুটে ও গোবর শলা জ্বালাচ্ছে। এর ফলে গোবর দিয়ে বানানো এই জ্বালানীর চাহিদা বেড়েছে। একারনে এগুলো তৈরী করে বিক্রির সুযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতে এই কাজ করে জীবীকা নির্বাহের পথ খুঁজে পেয়েছে অনেকে।

এমনই একজন ঘুটেকর্মীর দেখা মেলে শহরের ইসলামবাগ এলাকায় রেলওয়ের ফিদা আলি ইন্সটিটিউটের পরিত্যক্ত চত্বরে। বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে শুকাতে দেয়া নানা আকারের ঘুটের মাঝে বসে এক বৃদ্ধা। তিনি কাঁচা গোবর দিয়ে দুইহাতে তৈরি করছেন ঘুটে।

ময়না নামের ওই বৃদ্ধা বলেন, তৈরি করা ঘুটে গুলি পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ রোদে শুকানোর পর জ্বালানোর উপযোগী হয়। প্রায় সারা বছরই ঘুটে তৈরী করেন। ফাল্গুন থেকে চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত তথা রোদেলা দিনেই বেশী চলে ঘুটে তৈরির কাজ। তবে বর্ষাকালে শুকানো বেশ জটিল হয় বলে কম বানান তিনি। শুকনো ঘুটে মজুদ রেখে নিজ বাড়িতে জ্বালানো সহ বিক্রিও করা হয়।

ইসলামবাগ ছাড়াও শহরের হাতীখানা, মিস্ত্রিপাড়া, বাঁশবাড়ী, গোলাহাটসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নারীরা অবসর সময়ে গোবরের শলাকা বা ঘুটে তৈরি করছেন। গোবরের সাথে কাঠের গুড়া ও ধানের তুষও মেশানো হয় ঘুটে তৈরিতে। আর শলাকার ক্ষেত্রে পাটকাঠি বা বাঁশের কঞ্চি-বাতা ব্যবহার করা হয়।

মিস্ত্রীপাড়া এলাকার গৃহবধু বেবিয়া বলেন, এলাকার ডেইরি ফার্ম থেকে গোবর কিনে এনে তা দিয়ে শলাকা ও ঘুটে তৈরি করে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করছি। মাঝে মধ্যে ওইসব বিক্রিও করা হচ্ছে। ছোট ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তায় যে পরিমান গোল বা চ্যাপটা ঘুটে ধরে তা বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক হাত সাইজের প্রতিটি গোবর শলাকার দাম ৫ টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই গরম মৌসুমে গোবরের তৈরি করা ঘুটে মজুদ রাখি। যা বর্ষা মৌসুমে নিজ বাড়িতে ব্যবহার ও বিক্রি করা যায়।এছাড়া ঘুটে জ্বালানো ছাইও কিনে নিয়ে যান অনেক কৃষক। একদিকে ছাইগুলি মাটিতে পচে জমির উর্বরতা বাড়ছে অপর দিকে শাক-সবজিতে পোকাও ধরছে না।

শহরের বাঁশবাড়ী মহল্লার ছেদিয়া বলেন, গোবর দিয়ে তৈরি করা ঘুটে বা শলাকা রোদে শুকানোর জন্য রাস্তার পাশে বা মাঠে সাজিয়ে রাখা হয়। প্রায় ৬/৭ দিন রোদে শুকালে জ্বালানোর উপযোগী হয়ে যায়। এই জ্বালানী খুব ভালো জ্বলে এবং তাপ সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, এখন অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা মাঠে-ময়দানে পরে থাকা গোবর কুড়িয়ে এনে পাট কাঠি দিয়ে শলাকা বা মুষ্টি দিয়ে ঘুটে তৈরি করে। এতে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে। সেইসাথে অনেকেই তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের পর বিক্রি করে সাবলম্বি হচ্ছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম জানান, কাঁচা গোবর দিয়ে জ্বালানি উপকরন তৈরি করায় গোবরের অপচয় রোধ হচ্ছে।ঘুটে জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। একই সাথে গোবর পোড়ানো ছাই উৎকৃষ্ট সার হিসেবে ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে