অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার (১৪ মে) দুপুর ২টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানতে শুরু করে। ঝড়ের তীব্রতায় উড়ে গেছে ঘরবাড়ির চালা। উপড়ে গেছে গাছগাছালি। গাছ পড়ে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেলেও তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সেন্টমার্টিনের মতো টেকনাফের বাহারছরা, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ উপকূল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে গাছগাছালি। এতে অনেক সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের মতো বড় প্রভাব পড়েনি কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখার দ্বিতীয় ভাগ দেশের উপকূল অতিক্রম করবে। এরইমধ্যে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সেন্টমার্টিন অতিক্রম করেছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে সেন্টমার্টিন হয়ে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এসময় তা সেন্টমার্টিনে আঘাত হানে। সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজারেও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখনো কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন জোনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহফুজ বলেন, মোখার প্রভাবে প্রচুর ঝড় আর বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝড়ে গাছ ভেঙে সেন্টমার্টিনে দুইজন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে সেন্টমার্টিনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

ঘূর্ণিঝড় মোখায় কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানা গেছে। এই দুই উপজেলায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার তঞ্চ্যঙ্গা বলেন, কুতুবদিয়ায় মোখার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও ক্ষতির খবর আমাদের কাছে নেই। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করে দেখবো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এখনো পর্যন্ত কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সাগরে জোয়ার আসলে পানি ও বাতাসের তীব্রতা কিছুটা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত দুই লাখের অধিক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সেন্টমার্টিন নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। সেখানে দুপুর ২টা থেকে দমকা হাওয়ায় বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। দুইজন মারা গেছে বলে আমরাও খবর পাচ্ছি। তবে, সুষ্ঠু যোগাযোগ না থাকায় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু দিলদার নামে একজন গাছ পড়ে আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি।

আবু সুফিয়ান আরও বলেন, আমরা আজ রাতেও অবজারভেশনে থাকবো। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

উপকূলের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানান প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে