ডেস্ক স্পোর্টসঃ প্রতিপক্ষ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখন বাংলাদেশের বোলারদের সমস্যার দিকটি আবার একদিক থেকে সুবিধারও। সুবিধার বলেই বেদম মার খাওয়ার পরও পাল্টা চড়ে বসার সুযোগ থাকে।

সুযোগ থাকল বাঁচা-মরার ম্যাচেও। এই ম্যাচে যেমন বেদম মার খেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। এক ওভারেই খরচ করলেন ২৪ রান। এক সাকিব আল হাসান বাদে তাঁর সঙ্গে অল্পবিস্তর মার হজম করতে হলো অন্য বোলারদেরও। যাঁরা মারলেন, সেই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের বৈশিষ্ট্যই হলো তাঁদের মারে ঝুঁকিও থাকে। মারতে মারতে তৈরি হওয়া আউটের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল বাংলাদেশের জয়ের সূত্র।

সেই সূত্রও কাল ফিল্ডাররা মেলালেন ঠিকঠাক। একের পর এক ক্যাচ উঠল; কিন্তু পড়ল না। নিয়মিত বিরতিতে আসতে থাকা সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও ফিরল সিরিজে। ৩৬ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরানোর দিনটি ‘মধ্যমণি’ অধিনায়ক সাকিবের জন্য আবার বিশেষ দিনও। এ ম্যাচে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নতুন রেকর্ড গড়ার মতো অনেক কিছুই তো যোগ হলো তাঁর অর্জনের ভারেই শুধু মোটা হতে থাকা খাতায়।

সেই খাতায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচে ৫ উইকেট ছিল না আগে। ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে ওমানের বিপক্ষে ১৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়াই এত দিন এই ফরম্যাটে তাঁর সেরা বোলিং ছিল। কাল ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে বোল্ড করে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া সাকিবের ২১ রানে ৫ শিকার দেশের মাটিতে কোনো বাংলাদেশির সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিংও। সব মিলিয়ে সেরা বোলিং অবশ্য ২০১২-র আয়ারল্যান্ড সফরে বেলফাস্টে আইরিশদের বিপক্ষে ১৩ রানে ৫ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানিরই।

তবে অর্জনে-রেকর্ডে অনেক দিন থেকেই আর দেশের গণ্ডিতে সীমিত হয়ে নেই সাকিব। কাল তাঁর হাত ধরে বৈশ্বিক এক রেকর্ডের নতুন পাতাও তো খোলা হয়ে গেল। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২১১ রান করার পথে ব্যাট হাতেও তো ২৬ বলে ৪২ রানের হার না মানা অবদান আছে তাঁর। এর সঙ্গে ৫ শিকার যোগ হয়ে অনন্য এক রেকর্ডও হয়ে গেল। বাংলাদেশ অধিনায়ক বনে গেলেন ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অলরাউন্ডার, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যিনি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার পাশাপাশি নিয়েছেন ৫ উইকেটও। টেস্টেও ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি তাঁর আছে ১৮ বার, ওয়ানডেতে একবার। এবার টি-টোয়েন্টির ‘প্রথম’ তাঁকে বানিয়ে দিল ইতিহাসের অষ্টম বোলার, তিন ফরম্যাটেই যাঁর ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে।

এক ম্যাচেই এত কিছু! সিরিজ জেতার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে তাঁর সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার দিন স্বাগতিকরা চেয়েছিল আগের ম্যাচের ভুল থেকে বের হতেও। তাঁরা বের হলোও। কিন্তু এ দিনেই আবার ভুলের মহোৎসব করলেন দুই বাংলাদেশি ফিল্ড আম্পায়ার গাজী সোহেল ও তানভীর আহমেদ। এভিন লুইস ও শিমরন হেটমায়ারের ব্যাটে বল লাগার পরও তাঁদের বিপক্ষে এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দেওয়ার ভুল করেছেন তাঁরা। ওই দুজন রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচেছেন। অবশ্য আম্পায়ারদের ভুলের সুবিধাভোগী হিসেবে দিনের শেষে সাকিবের নামটিও আসছে।

মাহমুদ উল্লাহর (২১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৪৩) সঙ্গে তাঁর গড়া অবিচ্ছিন্ন ৯১ রানের পার্টনারশিপটি টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা। সেটি গড়ার পথেই ২০ রানে থাকা সাকিব প্রতিপক্ষ অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েটের অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বলে চালাতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটেও লেগেছিল, উইকেটরক্ষকের গ্লাভসেও জমা পড়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে ক্যারিবীয়রাও আবেদন করেনি। আরো আশ্চর্যজনক যে আম্পায়ার গাজী সোহেল তাতে ওয়াইড বলের সংকেত দেন!

সাকিবের ইনিংস তাতে আরো বড় হয়। আরো ২২টি রান যোগ হয়। যা যোগ না হলে বাংলাদেশের ইনিংস হয়তো প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে ২০০-ও পেরোয় না! সিরিজে ফেরার জন্য এমন বড় ইনিংসের চাহিদার দিনে ভিত্তিটা দিলেন লিটন কুমার দাশ। যাঁর ব্যাটিংয়ের বৈশিষ্ট্যই হলো এটা যে ভীষণ অধারাবাহিক এ ব্যাটসম্যান নিজের দিনে প্রতিপক্ষের বোলারদের ছারখার করে দেবেন। যা দিয়েছিলেন নিজেদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফ্লোরিডায় সিরিজ নির্ধারণী টি-টোয়েন্টির দিনও। ৩১ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ম্যাচভাগ্য গড়ে দিয়েছিলেন। সেবার ২৪ বলে ফিফটি করা লিটন কাল তাতে পৌঁছলেন ২৬ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৬০ রানের ইনিংসে শুরুর ছন্দটা ধরে দিয়ে যাওয়ার পর বাকি কাজ সারলেন সাকিব-মাহমুদ উল্লাহ।

এরপর ক্যারিবীয়দের রান তাড়ায় বেদম মার হজম করলেন বোলাররা। কিন্তু মারতে মারতে প্রচুর সুযোগও দিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। সেগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগানোর দিনে টপাটপ উইকেট তুলে নেওয়া সাকিবের নতুন রেকর্ড গড়া সিরিজেও ফেরাল বাংলাদেশকে!

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে