জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেছেন, সৈয়দপুরসহ নীলফামারীর জেলায় কর্মরত সাংবাদকর্মীদের সাথে আমার কোনো বিরোধ নেই। ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সংগঠনকে ব্যবহার করে কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করিনি। অথচ দুয়েকটি সংবাদ মাধ্যম বরাবরই আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সৈয়দপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, সম্প্রতি সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজার নির্মাণকে কেন্দ্রে করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় অনাকাঙ্খিতভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। সবজি মার্কেট করছে পৌর কর্তৃপক্ষ অথচ আমাকে রেলওয়ের ভূমিদস্যু বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।

তিনি আরও বলেন, আমার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের নামে শহীদ জহুরুল হক সড়কস্থ ৩৬০ বর্গফুট, গেটবাজার শপিং সেন্টারে ১২০৮ বর্গফুট, শেরেবাংলা সড়কে ১৮০ বর্গফুট ও কয়া বাঁশবাড়িতে আমার মায়ের নামে দশমিক ৭৯ শতক রেলওয়ের জমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছি। এর বাইরে আমার দখলে রেলওয়ের এক ইঞ্চি জমিও নেই। অথচ আমাকে বারবার ভূমি দস্যু বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

মোখছেদুল মোমিন বলেন, আমি নাকি রেলওয়ের খালাসি পদ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছি। কিন্তু আসল কথা আমি কোনোদিনও খালাসি পদে চাকুরি করিনি। আমি ১৯৭৭ সালে ট্রেড এ্যাপ্রেন্টিস (শিক্ষানবিশ) পদে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় যোগদান করি। আমার বাবাও রেলওয়ের শ্রমিকলীগ নেতা ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। রেলওয়ে শ্রমিক লীগের স্থানীয়, আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় কমিটি, বঙ্গন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কমিটিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার চাচা উপজেলা চেয়ারম্যান জাওয়াদুল হক সরকার মারা যাওয়ার পর উপ-নির্বাচনে ওই পদে আমাকে দল মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমি আমার চাকুরির মায়া ত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই। এর পরের বারও জনগন আমাকে নির্বাচিত করেন। অথচ সমালোচনা করা হচ্ছে আমি খালাসি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আরও জানান, বরাবরই দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলাম। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থাতে বিএনপি-জামাত সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথের প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। ১৯৯৪ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা হতে সৈয়দপুরে ট্রেনমার্চ কর্মসূচীর ঈশ্বরদীতে মাননীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। এ প্রেক্ষাপটে ওইদিন রাতে এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে পাহারা দিয়ে দলীয় সভানেত্রীকে নিরাপদে সভাস্থলে নিয়ে আসা হয়।

মোখছদুল মোমিন জানান, ২০০৪ সালে সৈয়দপুর পৌর পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সাংসদ প্রয়াত আমজাদ হোসেনের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রয়াত আখতার হোসেন বাদলের জয় সুনিশ্চিত করি। এর জেরে ২০০৫ সালে আমাকে হত্যার উদ্দশ্যে ভারতের বৈদ্যনাথপুর থেকে পেশাদার খুনিকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। এরপরও আমি দলের কোনো কর্মসূচী থেকে পেছপা হইনি।

এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে মোখছেদুল মোমিন বলেন, ধারাবাহিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোয় ক্ষোভ ও কষ্টে এক সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে পা দিয়ে মুখ ফসকে লাথি মারার কথা বলে ফেলেছি। এ জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আজমল হোসেন সরকার, পৌর প্যানেল মেয়র শাহীন হোসেন, বাঙ্গালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ডা: শাহাজাদা সরকার, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর জোবাইদুর রহমান শাহীন, পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক কাজী নজরুল ইসলাম রয়েল, উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আব্দুল মোমিন সররকার, বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পু, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ, পৌর ছাত্র লীগের সম্পাদক সিফাত সরকারসহ আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে