বিনোদন প্রতিনিধি, মারুফ সরকার : স্বপ্ন ছিল, সিনেমার নির্দেশক হবেন। সেই স্বপ্নের পথেই পা বাড়াচ্ছিলেন তরুণ পরিচালক অরণ্য পলাশ। ছবির প্রযোজক মাঝপথেই পালিয়ে যান। তাতে কী! নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে নিজেই টাকা জোগাড় করতে উদ্যোগ নেন অরণ্য। জানা যায়, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে দেশাত্মবোধক একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন পরিচালক অরণ্য পলাশ। তবে মাঝপথেই ছেড়ে চলে যান ছবির প্রযোজক। অগত্য ছবি বানানোর টাকা জোগাড় করতে স্ত্রী তার জমি গয়না বিক্রি করে দেন অরণ্যকে। তবে তাতেও পুরো টাকা না ওঠায় ঋণও নেন তিনি। ‘গন্তব্য’ নামে এই ছবির কাজ শেষ হলেও শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি দিতেই পারেননি। এমনকি একটি টিভি চ্যানেলের কাছে ছবিটি বিক্রির কথা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। আপাতত বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটছে তরুণ পরিচালক অরণ্য পলাশের। সিনেমাটি এরই মধ্যে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু নির্মাতার স্বপ্নের এই চলচ্চিত্র গন্তব্য খুঁজে পাওয়ার আগেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।

‘অর্থাভাবে সিনেমার পরিচালক এখন হোটেল বয়’- এমন শিরোনামের অসংখ্য সংবাদ অর্ন্তজালে ভাসছে। জানা যায়, সিনেমার নেশায় সব বিক্রি করে আজ তিনি নিঃস্ব। এদিকে কোনো আয় না থাকায় প্রতি মাসে যোগ হতে থাকে ঋণের সুদ। পেট চালানোর জন্য দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরা ও তিনবেলা খাওয়ার চুক্তিতে রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন তিনি। এই হলো সংবাদভাষ্য। স্বাভাবিকভাবেই পাঠক এই সংবাদে ব্যথিত হয়েছেন। কিন্তু নেপথ্যের ঘটনা কী? ঠিক কোন কারণে একজন সৃজনশীল মানুষকে হঠাৎ করেই এমন একটি পেশা বেছে নিতে হলো? কারণগুলো জানতে এই প্রতিবেদক অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্বের বলি ‘গন্তব্য’। আর এ কারণে নির্মাতার স্বপ্ন এখনও অধরা।

‘গন্তব্য’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন এলিনা শাম্মি। অরণ্য পলাশ ও এলিনা শাম্মি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। সিনেমা প্রযোজনা করতে গিয়ে এলিনার ঋণ করতে হয়। ঋণ বাবদ প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হতো এলিনা শাম্মিকে। এখনও ঋণ বাবদ প্রতি মাসে এলিনাকে কিস্তি দিতে হচ্ছে। অরণ্য পলাশ ব্যবসা বা চাকরি করতেন না। যে কারণে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বহন করতেন স্ত্রী এলিনা। সম্প্রতি এলিনা টাকা দেওয়া বন্ধ করলে খবরের শিরোনামের আসেন অরণ্য পলাশ। এদিকে কৌশলে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিতে সিনেমাটি নিজের নামেও নিবন্ধন করান অরণ্য পলাশ। কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভাটা পড়ে। তখন নিবন্ধনের অভিযোগ তুলে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান এলিনা। তারপরই বিপাকে পড়েন অরণ্য পলাশ। বাধ্য হয়ে তাকে হোটেল বয়ের কাজ করতে হচ্ছে। কথাগুলো পুরোপুরি উড়িয়ে না দিলেও কিছুটা সহমত প্রকাশ করেছেন অরণ্য পলাশ।

এলিনা বলেন, ‘প্রথমে সিনেমাটির প্রযোজক অন্য কেউ ছিল। তিনি পালিয়ে গেলে আমি জমি গয়না বিক্রি করে ৪৫ লক্ষ টাকা দেই। অরণ্য অল্প কিছু টাকা তার বাবার কাছ থেকে এনে কাজ শেষ করেছেন। কিন্তু আমার সর্বস্ব শেষ করে সিনেমাটির জন্য টাকা দেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে ঋণ নিয়ে সিনেমার কাজ শেষ করেছি। তবে এত টাকা দিয়েও প্রযোজকের জায়গায় নিজের নামটি জায়গা পেল না। তাছাড়া এ ছবির নায়ক ফেরদৌস ভাই নিজের পারিশ্রমিক নেননি। আমরা তাকে সাইনিংয়ের সময় একটি সম্মানী দিয়েছি। তিনিও চেয়েছেনে কাজটি সুন্দর ভাবে শেষ হোক। ছবির সাথে অনেকেই যুক্ত টাকা পাবেন সবাই আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। অনেক দিন হয় সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রও পেয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সিনেমাটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা যা দাম বলছে তা যথেষ্ট নয়।’

এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, ‘সিনেমা তো বড় লোকদের খেলা। তাকে সিনেমা বানাতে বলছিল কে? মাত্র একটা সিনেমা বানিয়ে সিনেমার পরিচালকদের হেয় করেছে। সে শুধু মাত্র আমাকে সাইনিং মানি দিয়েছে। যেখানে আমরা তাকে অনেক হেল্প করেছি, দেশের বাইরে ফেস্টিভালে চালাতে সহযোগিতা করব বলেছি। আবার সেখানে সে বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে! তাকে কে বলছে সিনেমা বানাতে! এর আগে যদি সে অনেকগুলো সিনেমা বানাতো তাহলে সব ঠিক ছিল। এ নিয়ে কোন স্ট্যান্ডবাজী করলেও আমাদের যেন না জড়ায়। সে যেগুলি করছে তা আসলে শোভনীয় নয়। বিষয় খুবই লজ্জাজনক।’

‘গন্তব্য’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আইরিন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী রাজু, আফফান মিতুলসহ অনেকে। সিনেমাটির জন্য এসব শিল্পীরাও নামে মাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছেন। কেউ কেউ বিনা পারিশ্রমিকে সিনেমায় কাজ করেছেন বলেও জানা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে